কঠোর লকডাউন শুরু, মানতে হবে ২৩ নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ২৩, ২০২১, ০২:৫৩ পিএম

কঠোর লকডাউন শুরু, মানতে হবে ২৩ নির্দেশনা

শুক্রবার (২৩ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে থেকেই শুরু হয়েছে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন।আগামী ৫ আগষ্ট পর্যন্ত চলা এবারের এই লকডাউন আগের সব লকডাউন থেকে বেশি কঠোর হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে অগেই জানানো হয়েছে। কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি)  ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) শুরু হওয়া লকডাউন বাস্তবায়নে সরকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে। এবিষয়ে বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) গণমাধ্যমে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘অফিস-আদালত, গার্মেন্টস-কলকারখানা ও রফতানিমুখী সব কিছুই বন্ধ থাকবে। এটা এ যাবতকালের সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ। এ সময় মানুষের বাইরে আসার প্রয়োজনই হবে না। কারণ অফিসে যাওয়ার বিষয় নেই। যারা গ্রামে গেছেন, তারা জানেন যে অফিস বন্ধ। তাদের ৫ তারিখের পরে আসতে হবে।’ মাঠে পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও  সেনাবাহিনীর  সদস্যরা থাকবেন বলেও তিনি জানান।

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এবারের লকডাউন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই ১৪টা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে আমাদের আহ্বান থাকবে, মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসা যাবে না। ঘরের বাইরে এলে অবশ্যই ডাবল মাস্ক পরবেন। যদি এটা করতে পারি ১৪ দিনের জন্য, তাহলে আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারব। না হলে তা বাড়তে থাকবে। হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে আমাদের অসুবিধা হবে।’

এদিকে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে এসময়ে ফেরিতে যাত্রীবাহী সব ধরণের যান পরিবহন বন্ধ থাকবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি প্রয়োজনে শুধুমাত্র পণ্যবাহী যান ও  অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা হবে।

তবে কোরবানির  পশুর চামড়া সংশ্লিষ্ট খাত, খাদ্যপণ্য এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পণ্য ও ওষুধ প্রস্তুতকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে।

কঠোর লকডাউনের মধ্যেও আগামী রবিবার (২৫ জুলাই) থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে। পাশাপাশি বীমা কোম্পানি ও শেয়ারবাজার কার্যালয়  খোলা থাকবে। কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে কীভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে এ নিয়ে ১৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত বিধিনিষেধ চলাকালে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ সময় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া সীমিত লোকবল দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলো খোলা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনষেধ আরোপ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে মোট ২৩টি বিধিনিষেধ মানার বিষয়ে বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে ২৩টি বিধিনিষেধ

১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে;

২.সড়ক, নৌ ও রেলপথে গণপরিবহণ (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে;

৩. শপিংমল/ মার্কিটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে;

৪. সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে;

৫. সকল প্রকার  শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে;

৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরণের সামাজিক (বিবাহত্তোর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে;

৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে;

৮. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে;

৯. সরকারি কর্মচারিগণ নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি ( ই-নথি, ই-টেন্ডিারিং, ই-মেইল, SMS, WhatsApp-সহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন;

১০. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ,কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমুহের কর্মচারি ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে;

১১. বিভাগীয জেলা উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভঅগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে;

১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/ নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে;

১৩.বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে;

১৪. কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯:০০ টা থেকে বিকাল ৩:০০ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে;

১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে;

১৬. টিকা কার্ড প্রদান সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে;

১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরা সকাল ৮:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয়(Online/Take away) করতে পারবে;

১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন;

১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে;

২০. ‘ আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন;

২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি,পুলিশ,র‌্যাব ও অনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রযোজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে;

২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট  নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং

২৩. সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

Link copied!