মে ১৬, ২০২৪, ০১:০৮ পিএম
বিদেশি বন্দর পরিচালনাকারীরা এখন বিনিয়োগ করছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সেই সঙ্গে একটি সময় আসবে যখন চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এমন স্বপ্ন ও সম্ভবনার কথা শুনিয়েছেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
‘চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণসহ একাধিক প্রকল্পের জন্য রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) চট্টগ্রাম বন্দর ও আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা স্মারকপত্র (এমওইউ) স্বাক্ষর’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আব্দুল্লা কাসিফ আল মৌদি, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের রিজিওনাল চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আহমেদ আল মুতায়া।
সমঝোতা স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই।
চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে আরব আমিরাতের আবুধাবী পোর্টস গ্রুপ, তার পাশাপাশি তারা অবকাঠামো উন্নয়নের যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করবে এমনটাই রয়েছে স্মারকপত্রে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে মেরিটাইম সেক্টরে আমাদের যাত্রাকে পুনর্জীবিত ও উজ্জীবিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সময়ে সমুদ্র ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে।”
উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে মন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বন্দরের সক্ষমতা অর্জন করেছে। মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হচ্ছে। মংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সক্ষমতা অর্জন করবে। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েছে। এটা একটা নতুন অনুভূতি।”
“আগে মাদার ভেসেলে পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হতে হতো। এখন মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হচ্ছে। এতে নির্ভরশীলতা কমে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দর আঞ্চলিক ‘হাব’-এ পরিণত হবে” বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদির রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, বলে তিনি জানান “বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ যাতায়াত করবে। জোয়ার-ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর অন্য ধরনের উচ্চতায় চলে যাবে। বে-টার্মিনালের সঙ্গে রোড, রেলওয়ে কানেক্টিভিটি থাকবে। পণ্য পরিবহন সহজলভ্য হবে।”
দেশের যে কোনো বন্দরে বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। অল্প সময়েরই টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু করতে চাই।”
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগরের তীরে ‘বে-টার্মিনাল’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ‘বে-টার্মিনাল’ নির্মাণের পরিকল্পনার পর সেখানে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০১৭ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটি তাদের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে।
২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত মাস্টার প্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করেন। নকশা অনুযায়ী ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও ১ হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল নির্মিত হবে। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার।
সেই সঙ্গে মাস্টার প্ল্যানে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়। এদিকে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় প্রয়োজনীয় নাব্যতা থাকায় সেখানে ১২ মিটার ড্রাফটের ও ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। আবহাওয়া ও সাগরের বড় বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে একটি ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার বা ঢেউ নিরোধক বাঁধও নির্মাণ করা হবে। বে- টার্মিনাল থেকে বহির্নোঙ্গরের দূরত্ব ১ কিলোমিটার।
মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর ও আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ যৌথভাবে নির্মাণ করবে। ১ হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি কন্টেইনার টার্মিনাল সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান পিএসসি ও অন্যটি দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড অর্থায়নের সম্ভাবনা আছে বলে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র।
ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রেক ওয়াটার ও এক্সেস চ্যানেল ড্রেজিংয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়ে সূত্র জানিয়েছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৬৬ দশমিক ৮৫ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি এরই মধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ও ৫০০ দশমিক ৬৯ একর সরকারি খাস জমি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। বছরে ৫০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রার প্রকল্পটির ২০২৬ সালে অপারেশনে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।