কর্পোরেশনের গাফলতিতে প্রাণ হারাল শিশু জিসান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১৩, ২০২১, ০২:১৮ এএম

কর্পোরেশনের গাফলতিতে প্রাণ হারাল শিশু জিসান

দেয়াল ঠিক না করেই হয় ড্রেনের কাজ। এদিকে দেয়াল বেকে যাচ্ছে তার দিকে করো কোন খেয়াল নেই। যার কারণে বাসা থেকে স্কুল যাওয়ার জন্য বের হয়েও আর ফেরা হলো না বাসায় শিশু জিসানের। কিন্তু শিশু জিসানের মৃত্যুর দায় নিতে চায় না কেউ। একজন দায় করে আরেকজনকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলল

ভেঙ্গে পরা দেয়ালের ঠিক বিপরীত পাশেই জাফর উদ্দিনের দোকান। ড্রেনের কাজ হলেও দেয়ালটার কাজ কখনোই কেউ করে নেই বলে জানান তিনি। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘এই দেয়ালটার বয়স অনেক বেশি হয়ে গেছে। এই দেয়ালটাতে কোন ধরনের প্লাস্টার পিলার কিছুই নেই। এর অনেক যায়গায় ফাটল ধরা। আর যে অংশটুকু পরেছে সে অংশটুকু অনেকদিন ধরে বাঁকা হয়ে ছিলো। তারপর আবার এই দেয়াল ঘেষে হয়েছে ড্রেনের কাজ। ফলে দেয়ালটা আরো বেশি দূর্বল হয়ে গেছে। আর এটা ঠিক করার কাজ সিটি কর্পোরেশন বা পিআইডাব্লিউটিএ কেউই কখনো করে নেই’।

CHobi

দেয়ালের কাজ ৬ মাস আগেই করেছিল সিটি কর্পোরেশন

একই অভিযোগ করলেন পাশের চায়ের দোকানদার মন্নু মিয়া। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘এই দেয়ালটা বহুকাল ধরে এই অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে শুধু ড্রেনের কাজই করছে দেয়ালেরতো কোন কাজ করে নেই। যেখানে কাজ করার দরকার সেখানে কোন ধরনের কাজ সরকারের কোন বিভাগই করে না। এই এলকাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। প্রতিদিন হাজার হাজার লোক এখান দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু এই যায়গায় কোন ধরনের কোন কাজই হয়না’।

তবে সিটি কর্পোরেশন ড্রেনের কাজ করার সময় দেয়ালের সব মাটি সরিয়ে ফেলার কথা জানান দীর্ঘদিন ধরে পিআইডাব্লিউটিএ বসবাস করা রুজেনা পারভিন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘ড্রেন করার সময় সিটি কর্পোরেশন দেয়ালের ভারসম্যই নষ্ট করে দিয়েছে। দেয়ালের সকল ইট মজবুত রয়েছে। যদি দেয়ালটা দূর্বল হতো তবে কি ইটগুলো মজবুত হতো। যখন সিটি কর্পোরেশন এই ড্রেনের কাজ করে তখন পিআইডাব্লিউটি থেকে চিঠি দিয়া হয় যে তারা যেনো দেয়ালটাকে আগে বিপদমুক্ত করতে দেয় তারপর ড্রেন করে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কোন ধরনের আলাপ না করেই ড্রেনের কাজ কর ‘।  

দ্রুত পদক্ষেপ নেয়নি কেউ

এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কায়সার কবীর দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমরা লিখিতভাবে তাদের অবহিত করি যে, এভাবে দেয়াল নির্মাণে জানমালের ঝুঁকি রয়েছে। তথাপি, সেখানে নিরাপত্তা বিধি অনুসরণ করা হয়নি। এবং ড্রেন করতে গেলে বাউন্ডারি ওয়াল থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে করতে হয়। সেটিও মানা হয়নি।

ড্রেনের কাজ ৬ মাস আগেই শেষ করে সিটি কর্পোরেশন। তবে এ ঘটনায় একটি কারিগরি কমিটি গঠন করার কথা জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ’ড্রেনের কাজ ৬ মাস আগেই শেষ করেছে। তারপর পিআইডাব্লিউটিকে বলা হয়েছে দেয়ালটা ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ড্রেন করার সময়তো এই দেয়ালটা ধসে পরে নেই। ৬ মাস পরে দেয়ালটি ধসে পরেছে। আমরা যখন কাজ করি তখনও বার বার তাদের বলছি দেয়ালটাকে ঠিক করার জন্য। কিন্তু তারাই কোন ভুক্ষ্রেপ দেখায় নেই। আমরা এখন একটা কারিগরি কমিটি করবো তারপর কমিটি পরিদর্শন করে যে সিদ্ধান্ত দিবে তার উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।

আর পুরো ঘটনার দায় নিতে নারাজ দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘যার অবহেলার কারণে এই ঘটনা ঘটবে তাকেই এ দায় নিতে হবে। এখন প্রথমে আগে দেখতে হবে কার অবহেলার কারণে এই ঘটনা ঘটছে। তারপর তাকে দায় দিতে হবে। আমরা যখন কোন কাজ করি তখন আশেপাশের ঝুকি ও কারিগরি বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা কাজ করে থাকি’।

Link copied!