দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি সেতু সম্পর্কে জানুন

আল আমিন তুষার

জুন ২৬, ২০২২, ০৬:০১ পিএম

দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি সেতু সম্পর্কে জানুন

নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ । পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র আরও কত নদী আমাদের। এক সময় এই নদীপথ ছিল যাতায়তের প্রধানতম মাধ্যম। দিন পাল্টেছে, মানুষের জীবন যাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। যোগাযোগ অবকাঠামো দ্রতগতির করতে সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত বড় বড় সেতুগুলোর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে যাতায়াতের ভোগান্তি যেমন কমেছে, তেমনি যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। 

চলুন আজ জেনে নেই এখন পর্যন্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি সেতু নিয়ে। 

পদ্মা সেতুঃ 

পৃথিবীর ২য় খরস্রোতা নদী পদ্মা নদীর উপর নির্মিত এই বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেতু । মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলাকে যুক্ত করেছে এই সেতু। সেতুটি দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ টি জেলাকে সরাসরি যুক্ত করেছে রাজধানীর সাথে। ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল প্রদান করে প্রথমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহন করেন এবং পরদিন সেতুটি জনসাধরনের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। 

বঙ্গবন্ধু সেতুঃ উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার

প্রমত্ত যমুনার বুক চিরে ১৯৯৮ সাল থেকে দাড়িয়ে আছে এই সেতু। সেতুতে একপাশে সিরাজগঞ্জ আরেকপাশে টাঙ্গাইলকে সংযুক্ত করেছে। শুধু দেশই না বরং ৪৮০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটির নির্মাণ কাজ যখন শেষ হয়, তখন দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে এটি ছিল বিশ্বের ১১তম। নির্মাণশৈলীর দিক থেকেও এটি অনন্য। দেশের ২য় বৃহত্তম বহুমুখী এই সেতুর একদিকে রয়েছে সড়কপথ, তেমনি রয়েছে মিটার গেজ এবং ব্রড গেজ রেললাইন।  

শাহ আমানত সেতুঃ চট্টগ্রাম

বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়কে অবস্থিত কর্ণফূলী নদীর শাহ্ আমানত সেতু দেশের দক্ষিণ প্রান্তের জেলাগুলোর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে। ৯৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৪.৪৭ মিটার প্রশস্ত এ সেতুটি দেশের প্রথম বৃহৎ কোন ক্যাবল সাপোর্টেড সেতু। এটি চালু হয় ২০১০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর । এই সেতুর গুরুত্ব বাড়ার কারণ হল দেশের অন্যতম কিছু টুরিস্ট স্পটের রাস্তাতেই এর অবস্থান। অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও এই ব্রিজকে যতটা সম্ভব প্রশস্ত করা হয়েছিল। এতে আছে চারটি আলাদা লেনের পাশাপাশি দেড় মিটার করে দুটি আলাদা লেন, যা দিয়ে রিকশার মত পেশীচালিত যানবাহন চলাচল করতে পারে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজঃ পাবনা

দেশের প্রাচীনতম সেতুগুলোর একটি হচ্ছে পাবনার বিখ্যাত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ । ২০১৫ সালে ব্রিজটি নির্মাণের ১০০ বছর পূর্ণ হয় । অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয়ের নামে নামকৃত এই ব্রিজটি সেসময়ে কলকাতা এবং পূর্ব বাংলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ইংরেজরা তৈরি করে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এই ব্রিজে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুক্তিসেনারা পাকিস্তানী আর্মির সাথে যশোর এলাকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় যা স্ট্রাটিজিক্যালি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাবনার ঈশ্বরদীতে, পদ্মা নদীর উপরে এই স্টিল নির্মিত ব্রিজটি এমনভাবে বানানো যেন নিচে বয়ে চলা নদীর গতিপথের উপর খুব বেশি প্রভাব না পড়ে। প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা এই ব্রিজটি হয়ত দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত সেতুর একটি নয়, কিন্তু ঐতিহাসিক দিক বিবেচনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেতু নিয়ে করা যে কোন তালিকায় এর নাম আসতেই হবে।

খান জাহান আলী সেতু

রূপসা নদীর নামেই বেশি পরিচিত এই সেতু । নদী এবং ব্রিজের সৌন্দর্য্য দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে জড় হন। সুন্দর তো বটেই, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করাতেও এর ভূমিকা অপরিসীম। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ১.৬৪ কিলোমিটার লম্বা এবং ১৬.৪৮ মিটার চওড়া এই ব্রিজটির বেশ গুরুত রয়েছে।  ২০০৫ সালের ২১ মে সেতুটি চালু করা হয়। 

 

খালি চোখে দেখলে একটি সেতু হয়ত আর দশটি স্থাপনার মতই। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় কীভাবে একটি সেতু কোন অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে পাল্টে ফেলে। তাহলে আজ এ পর্যন্তই, এমনই নানান তথ্য পেতে দ্যা রিপোর্টের সঙ্গেই থাকুন। 

 

 

 

Link copied!