পূজাণ্ডপের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যবহার করছে সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট

অক্টোবর ২০, ২০২১, ০৬:০৭ এএম

পূজাণ্ডপের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যবহার করছে সরকার

পূজাণ্ডপে হামলার ঘটনাকে পূঁজি করে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শান্তি মিছিলের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং বিভাজন সৃষ্টি করে তারা এটাকে পূঁজি করে সেটাকে আবার তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। কিছুক্ষন আগে একজন বলেছেন, আজকে তারা (আওয়ামী লীগ) শান্তি মিছিল বের করেছে’।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অশান্তি ঘটালেন আপনারা, আগুন দিলেন আপনারা, মারলেন আপনারা, গুলি করলেন আপনারা এবং নিরহ মানুষদের হত্যা করলে আজকে শান্তি মিছিল বের করছেন। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। এই আওয়ামী লীগ এটাই। এটাই আওয়ামী লীগের খাঁটি চরিত্র।এটাই তারা করে এসেছে জন্মের পর থেকে’।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এদেশের মানুষ অনেক বেশি কষ্ট পাবে। আমাদের অর্জনগুলো সমস্ত হারিয়ে যাবে। আমরা আরো বেশি নিচের দিকে নামতে থাকবো। তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সকল সচেতন মানুষ যারা আছি তারা এই দানবীয় সরকারকে সরাতে হবে। এদের সরাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, সাদা-কালো, বাম-ডান সকলকে এক হয়ে এদের সরাতে হবে। এদেরকে সরিয়ে এখানে জনগনের একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে, জনগনের একটা সরকার তৈরি করতে হবে, জনগনের একটা বাসভূমি তৈরি করতে হবে।তাহলেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে সবচেয়ে বেশি সন্মান প্রদর্শন করা হবে’।

এবারের পূজামণ্ডপে মানুষজন কম উপস্থিত ছিলো উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ দেখুন এই যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা-সংকট সরকার তৈরি করেছে। এখানে দাদা (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) আছেন। দাদার বাড়িতে পূজা হয়েছে সেই বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। এর আগের বছর যখন গেছি তখন দেখেছি কি উতসব কি আনন্দ। সেখানে কাছাকাছি আরো কয়েকটা পূজামন্ডপে পূজা হচ্ছে লোকজন রাস্তায় বোঝাই হয়ে ছিলো। এবার গিয়ে দেখলাম দাদার বাড়িতে ওইভাবে লোক নেই্ কারণ মানুষ ভয় পেয়ে গেছে, যেভাবে লোক আসছে না। পূজা সেভাবে হচ্ছে না। এবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসছি, সেখানেও আমি দেখেছি অনেক কম মানুষ, বনানীতে পূজামন্ডপে গেছি সেখানেও অনেক কম মানুষ। কোনো? আমাদের অন্যতম ভাই, আমাদের পাড়া-প্রতিবেশি, আমাদের দেশের স্বাধীন নাগরিক তারা কোনো তাদের ধর্মের উৎসব পালন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে বিভাজন সৃষ্টি করছে’।

আওয়ামী লীগ কখনেো গণতন্ত্র ফেরত দেবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা বুঝার কোনো কারণ নেই যে, তারা আমাদেরকে গণতন্ত্র দেবে। গণতন্ত্র তারা নিজের হাতে শেষ করেছে ১৯৭৫ সালে এবং এবার ২০০৮ সাল থেকে শুরু করেছে’।

বাংলাদেশের আত্মা কী প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের আত্মা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ, মুক্ত সমাজ। সেই আত্মাকে তারা ধবংস করছে পরিকল্পিতভাবে। আপনারা দেখুন তারা কথা বলতে দেয়, লিখতে দেয় না। আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আজকে এই খবর বড় জোড় দুই সেকেন্ড/তিন সেকেন্ড বা ১/২ মিনিট দেখাতে পারবে, পত্রিকায় একটা কলাম হবে। আমি বলি দোষ তাদের না্। তাদের ম্যানজেমেন্ট, মালিক যারা এরা সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের সাথে জড়িত আছে হয় ব্যবসা-বানিজ্য বা অন্য কোনোভাবে অথবা সরকার তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যদি কিছু লিখতে যায় সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়, পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। হয়েছেও অনেক পত্রিকা ও অনলাইন এই সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। এই একটা দম বন্ধ করার একটা পরিবেশ এখন বিরাজ করছে’।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং পরবর্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে তার নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে তার জীবনাদর্শ ও দর্শন অনুসরণের আহবান জানান মির্জা ফখরুল।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শিক্ষা্বিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, পেশাজীবী নেতা গাজী আব্দুল হক, প্রকৌশলী মিয়া মুহাম্মদ কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডা. পারভেজ রেজা কাঁকন, অধ্যাপক আবদুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দলের রকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনে ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানসহ পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

Link copied!