বিএনপির জনসমর্থনে সরকারের 'হৃদকম্পন' শুরু হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১, ০৭:০৬ এএম

বিএনপির জনসমর্থনে সরকারের 'হৃদকম্পন' শুরু হয়েছে

বিএনপির জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারে 'হৃদকম্পন' শুরু হয়েছে। নতুন করে বিএনপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এতে করে নতুন জোয়ার, নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে বিএনপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, কমিটি গঠন করা হচ্ছে’। সরকারের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি জেগে উঠছে এ কারণে এখনো ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশি আক্রমণ চলছে। হয়রানি হচ্ছে, তল্লাশি চলছে। বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আর সেই জন্যেই আজকে তাদের (সরকার) হৃদকম্প উপস্থিত হয়েছে। তারা ভয়ে কাঁপছে। এজন্য তারা বিএনপির ওপরে চড়াও হয়ে আক্রমণ করছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার, কোনো একনায়ক, কোনো ফ্যাসিবাদী-অত্যাচারী শাসক কোনোদিনই টিকে থাকতে পারেনি। জনতার উত্তাল রোষের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তখন আর তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না’।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখনো সময় আছে, আপনারা দেয়ালের লিখনগুলো পড়ুন, মানুষের চোখের ভাষা দেখুন, মানুষের মনের কথা বুঝার চেষ্টা করেন। আপনাদের ব্যর্থতা, সংবিধান লঙ্ঘন করে জনগণের ভোটের অধিকারকে বন্ধ, আগের রাত্রে ভোট চুরি করে আপনারা যে অপরাধ করেছেন সেখানে থেকে যদি রক্ষা পেতে চাইলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন’।

তিনি আরো বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের পছন্দ মতো সরকার নির্বাচন করার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না’।

আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'কথা একটাই- এখন সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার। সময় এসেছে এই সরকারকে পরিষ্কার করে বলে দেওয়ার যে, তোমাকে আমরা চাই না। এখন বিদায় নিতে হবে এবং জনগণের নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় জনগণই তোমাকে সরতে বাধ্য করবে’।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর মন্তব্যের জের ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'নেতার কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। নেতা তো একজন আমাদের বাংলাদেশে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি এই দেশে দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারকে পরাজিত দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনো এখনো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে, লড়াই করতে গিয়ে গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে’।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সরকার ভেঙে ফেলেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'করোনা টেস্ট, টিকা সংগ্রহ, বিতরণ প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কীরকম তেলেসমতি কাণ্ড তারা ঘটিয়েছে এটা আপনারা নিজেরাই দেখেছেন। একজন স্বাস্থ্য মন্ত্রী আছেন যার প্রতিটি কথা জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক। তারা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শুধু করোনা নয়, তারা আজকে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছেন। এখন যদি কেউ হঠাৎ অসুস্থ হন, জরুরীভাবে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার পড়ে অন্য কোনো রোগেও হাসপাতালে আপনি কোনো চিকিৎসা পাবেন না।'

'বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, বাংলাদেশে সমস্ত ক্ষেত্রে একটা চরম অরাজকতা, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কারণ যারা দেশ চালাচ্ছে এখন, তারা দেশ চালানোর জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। ফলে কোনো জবাবদিহিতা নেই।'

রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মানুষজনের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুবরণ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এজন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখানে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, সুচতুরভাবে প্রথমে সংবিধানকে তারা কেটেকুটে এরকমের তাদের মতো করে করে নিয়েছে। পরে সমস্ত বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সকলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে দলীয়করণ করেছে। আজকে আমাদের যে গণমাধ্যম আছে, সংবাদমাধ্যম আছে তাদেরকেও তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে’।

‘আপনারা দেখেছেন যখন ওই ১৯৭৫ সালে বাকশাল হয়েছিল তার আগে যেমন এক ব্যক্তির পূজা চলছিল আজকে আবার সেই একইভাবে এক ব্যক্তির পূজা শুরু হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) পত্র-পত্রিকাগুলো যদি দেখেন তাহলে দেখবেন যে, কীভাবে সমস্ত গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমরা সারা দেশে দেখছি, আবার সেই পুরনো শ্লোগান তারা আবার নিয়ে এসেছে—এক নেতা এক দেশ, হাসিনার বাংলাদেশ। এরকম কাজ শুরু করেছে’।

Link copied!