বিএনপির পদযাত্রা: বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি-লাঠিপেটা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০৬:১৪ এএম

বিএনপির পদযাত্রা: বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি-লাঠিপেটা

সারাদেশে বিএনপির ৬৬টি সাংগঠনিক জেলায় পদযাত্রাকালে শনিবার ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি ও লাঠিপেটার সংবাদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বিএনপি-পুলিশ-আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। কুমিল্লা উত্তর জেলায় বিএনপির পদযাত্রা ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এলাকা। সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিপেটা ও গুলি চালানোর অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।

কুমিল্লাসহ চার জেলায় সংঘাতে ৫৯ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১২৩ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সাত জেলায় পুলিশি বাধার মুখে পড়ে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত এই কর্মসূচি। এক জেলায় কর্মসূচির আগে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অন্য স্থানগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’ দাবিতে শনিবার জেলায় জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা করে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

কুমিল্লা

কুমিল্লার দেবীদ্বার ও চান্দিনায় পুলিশের সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ ১৩টি রাবার বুলেট ছুড়েছে। কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে গাজীপুরে ছাত্রদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। ঝালকাঠিতে পদযাত্রায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

নেত্রকোনা

পদযাত্রায় অংশ নিতে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

নাটোর

কর্মসূচির আগে মোটরসাইকেল বহর থেকে বিএনপির কার্যালয়ের পাশে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। সকালে নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ বলেন, গত রাতে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করেছে পুলিশ। গতকালই এক ডজনের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। অথচ একই সময়ে শহরে ক্ষমতাসীনেরা প্রকাশ্যে রামদা, হকিস্টিক নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কিছুই বলেনি।

বাগেরহাট

বাগেরহাটে পদযাত্রায় বাধা দিয়ে পুলিশ অন্তত ৪০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সকাল পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শহরের মুনিগঞ্জ, পুরাতন বাজার ও থানার মোড় এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে জেলা বিএনপি।

মাগুরা

পুলিশের বাধায় ২০০ মিটার গিয়েই শেষ হয় বিএনপির পদযাত্রা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে শুরু করে পাশেই নবগঙ্গা নদীর শেখ কামাল সেতুতে গেলে পুলিশের বাধায় কর্মসূচি শেষ করতে হয়। বিএনপির অভিযোগ, কর্মসূচি ঘিরে গত কয়েক দিনে পুলিশ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এক ডজনের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। তবে বিকেলে শহরের নোমানী ময়দানের সামনে রাস্তা বন্ধ করে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

যশোর

কর্মসূচির আগের রাতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৪০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকালই তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জেলায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।

ফেনী

ফেনীতে পুলিশের বাধায় পদযাত্রা সংক্ষিপ্ত করেছে বিএনপি। বেলা ১১টার দিকে শহরের ইসলামপুর রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। তাকিয়া রোড হয়ে ট্রাংক রোডে পৌঁছানোর পর পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে মাত্র ২০০ গজ সামনে প্রেসক্লাব চত্বরে পৌঁছালে পুলিশ সড়কে ব্যারিকেড দেয়। বাধ্য হয়ে তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ করেন।

পটুয়াখালী

পটুয়াখালীতে শহরের বনানী এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথমে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে জেলা বিএনপি। সমাবেশ শেষে পদযাত্রা শুরু হয়ে পৌরসভা মোড়ে যাওয়ার পথে পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে। এতে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

ঝালকাঠি

সকালে ঝালকাঠি শহরের সাধনার মোড় এলাকায় কর্মসূচি পালনকালে লাঠিপেটা করে বিএনপির পদযাত্রা ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ঝালকাঠিতে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টার আগেই শহরের আমতলা সড়কের দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হতে শুরু করেন। সেখানে আগে থেকেই পুলিশ অবস্থান নেয়। নেতা-কর্মীরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। মিছিলটি সাধনার মোড়ে এলে পুলিশ বাধা দেয়।

ঝালকাঠি সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের তিন কর্মকর্তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

গাজীপুর

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, কর্মসূচি পণ্ড করতে পুলিশ আগের রাতে ৪০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বেলাল হোসাইন বলেন, বিএনপির অভিযোগ সত্য নয়। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, শুধু তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দুপুর ১২টার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শিববাড়ি-রাজবাড়ি সড়কে পদযাত্রা বের করা হয়। তবে পদযাত্রাটি দলীয় কার্যালয় থেকে জোড়পুকুর পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। পরে পুলিশের বাধায় দলীয় কার্যালয় থেকে ৫০ গজ সামনে গিয়ে পদযাত্রাটি শেষ হয়।

পদযাত্রা শেষে ফেরার পথে শহরের রথখোলা এলাকায় সাইফুল ইসলাম (২১) নামের ছাত্রদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে পুলিশের বাধায় আংশিক কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। শহরের ব্যাপারীপাড়ার সামনে থেকে পদযাত্রা বের হয়ে শান্তিকুঞ্জ মোড় এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়। পরে সেখানেই পদযাত্রা শেষ করেন তাঁরা। এর আগে ব্যাপারীপাড়া এলাকায় সমাবেশ করে বিএনপি।

নেত্রকোনা

বিএনপি নেতা–কর্মীদের হাতে থাকা ব্যানার–ফেস্টুন কেড়ে নিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা পদযাত্রা শেষ করে চলে আসার পর ঘটনাটি ঘটেছে। কারা ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ছাড়া তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

নীলফামারী

শহরের পৌর সুপারমার্কেটের সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শান্তি সমাবেশ শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগ। একই সময়ে পাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রার জন্য সমবেত হন জেলা বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাস্থল থেকে কয়েকজন যুবক বিএনপির সভাস্থলে হামলা চালিয়ে তাঁদের টাঙানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে চেয়ার ভাঙচুর করেন। এতে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

Link copied!