বিনিয়োগকারী খুঁজছে ফারবোট রোবটিক্স

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২২, ২০২২, ০৬:০৪ এএম

বিনিয়োগকারী খুঁজছে ফারবোট রোবটিক্স

বিশ্ব বাজারে এন্ড্রোয়েড ফোনের মতোই বাড়ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা রোবটের ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী এই চাহিদার কথা চিন্তা করেই বাণিজ্যিকভাবে রোবট নিয়ে কাজ করছেন তরুণ প্রকৌশলী এ এস ফারদিন আহমেদ। গত ৯ বছরের পরিশ্রমে ইতিমধ্যে ফারবোট (farbot) নামে চারটি রোবট তৈরি করেছেন ব্যক্তি উদ্যোগে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা আর বিনিয়োগের অভাবে আটকে আছে ফারদিনের স্বপ্ন।

https://www.youtube.com/watch?v=qG7SXPhw07E
 

২০১৩ সালে নিজের ভাল লাগা থেকে রোবটিক্স নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার। শুরুতে ক্যারিয়ার হিসেবে ভাবনা না থাকলেও জীবনের একটি দীর্ঘ সময় ছুটতে হয়েছে এই স্বপ্নের পেছনে। শুরুতে বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে প্রতিযোগিতাগুলোয় অংশগ্রহন নেশার মতো হয়ে যায় তার। বিচারকদের মন জয় করা তো দূরের কথা, কখনোই প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হওয়ায় সম্ভব হয়নি। এ কারণে নিরাশ হয়ে নিজের চেষ্টা থেকে সরে আসেননি কখনও। দিন রাত খাটুনির মাধ্যমে এক এক ক’রে ৯ বছরে প্রজেক্ট সংখ্যা তার হাজার পেরিয়ে গেছে। একটি রোবটিক্স কোম্পানি গঠন করতে ২০২১ এর জুন মাসে ICT বিভাগের অধীনে আইডিয়া প্রকল্প (idea.gov.bd) থেকে দশ লাখ টাকার অনুদান বরাদ্দ পেয়েছেন। সেখান থেকে তিনটি  ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপের চার লাখ টাকা পেয়ে এই প্রকল্পের প্রোডাক্ট হিসেবে Farbot-Farbot-ICT এর ৪র্থ ভার্সনের এই বাণিজ্যিক ভার্সনটি তৈরি করেন তিনি।

পাঁচ ভাইবোনের মাঝে সবার ছোট ফারদিন ব্যবহারিক প্রকৌশল বিদ্যা শেখার আগ্রহ নিয়েই একদিন ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আসেন। সত্যিকারে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কৌতুহল থেকেই ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক শুরু করেন। রুটিন ক্লাস ছাড়া কিছুই শেখা হচ্ছে না বাস্তবিক, নিজের কাছে নিজের প্রশ্ন যার উত্তর জানা নেই। ক্লাসে চূড়ান্ত অমনোযোগী ছাত্র বনে গেলেন। বন্ধুর বাসায় একদিন রোবটের একটা চীপ দেখে, তার কার্যকারিতা যাচাই-বাছাই করে পেয়ে যান নিজের কাংখিত পথের দিশা। সেখান থেকেই শুরু ফারদিনের ফারবোট জার্নি।

কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শেখানো হয় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ আর হার্ডওয়্যার নির্ভর রোবটিক্সের খুঁটিনাটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী একডেমিক প্রক্রিয়া। প্রোগ্রামিং: সফটওয়্যার নৈপুণ্যের বহুমাত্রিক পঠনপাঠন অন্যদিকে হার্ডওয়্যার: যন্ত্রপাতির সঠিক সনন্বয়ধর্মী ব্যবহারিকবিদ্যা৷ ফারদিন আগ্রহের বিষয় হার্ডওয়্যার তাই মনস্থির করা হয় আগ্রহের বিষয়কে অগ্রাধিকারে রেখেই একাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি টানার। কাগজে কলমে শেখা প্রোগ্রামিংয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে  শুরু হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরির দৌড়ঝাঁপ।

ফারদিনের ভাষায়, এলোন মাস্কের মতো উদ্যোগতা হতে পারবো না, তবে তার মত করে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখতে পারি। এটা বাইরের দেশের রোবট নয়, তাই মানুষ একে চিনবে না, বা  মার্কেটে ডিমান্ড হয়তো তৈরি হবে না। তবে ৩০ বছর বয়সে নিজের স্বপ্নপূরন করতে পারার থেকে ভালোলাগা আর কি হতে পারে। নিজের ছোট একটি রোবটিক্স কোম্পানি এবং কাজের একটি ল্যাব আছে। বড় না হলেও জায়গাটি মানসিক সন্তুষ্টির।

স্বপ্ন কি আর এতো সহজে ধরা দেয়? ফার্নিচারের দোকান থেকে রেস্টুরেন্ট, কর্পোরেট কোম্পানী থেকে সরকারি দপ্তর সবখানেই উপেক্ষা। অথচ গৃহস্থালি টুকিটাকি থেকে অফিসিয়াল সেক্টর কোথায় নেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবটের চাহিদা ফারদিনের প্রশ্ন।
 
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন ফারদিন। লাখ টাকার চাকরির প্রলোভন উপেক্ষা করে নামমাত্র সম্মানীতে তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তরুণদের। হাতে কলমে শেখাচ্ছেন রোবটিক্সের খুঁটিনাটি। নিজের স্বপ্নের নাটাই তুলে দিচ্ছেন তরুণ-তুর্কিদের হাতে।

বিশ্বব্যাপি প্রযুক্তি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স-এর অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এর কার্যক্রম এখনও তলানিতে।

সঠিক গবেষণা পরিকল্পনা ও দেশীয় কারখান না থাকায় ফারদিনের মতো উদ্যোক্তাদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। সরকারি বেসরকারি সঠিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে ফারদিনদের মতো তরুণ উদ্যোক্তারাই হতে পারে ভবিষ্যৎ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা।

Link copied!