রাত পোহালেই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১০, ২০২২, ০৫:২৫ এএম

রাত পোহালেই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা

কোরবানির পশু কেনার পর্ব শেষ করেছেন অনেকেই। বাকিরা আজ শেষ করবেন। পথের কষ্ট, দুর্ভোগ মাড়িয়ে গ্রামের বাড়ি পৌঁছানোর পর্বও প্রায় শেষ। রবিবার পবিত্র ঈদুল আজহা।

কিন্তু এবার কোরবানির ঈদ এমন এক সময় এল, যখন দেশের একটা অংশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বন্যায় দুর্গত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের চাপের পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সবকিছুরই ছায়া পড়েছে এবারের সাধারণ মানুষের ঈদ আনন্দে।

হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হয়। কোরবানির ইতিহাস সুপ্রাচীন। হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর সুন্নত অনুসরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য মহান আল্লাহতাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। পরপর দুই বার তিনি পশু কোরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তাঁর কেউ নেই। আল্লাহ পাক তাঁকেই কোরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)–কে আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয়চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করতে বলেন।

হযরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি চোখ বেঁধে নিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতে এ সময় হজরত ইসমাইল (আ.)–এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়।

ঈদের জামায়াতের আগে খুতবায় হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)–এর কোরবানির এই অমর কাহিনি তুলে ধরেন ইমামরা। এর মধ্য দিয়ে বিনম্রচিত্তে তাঁদের স্মরণ করবেন সারা বিশ্বের মুসলমানরা।

১০ দিন আগেই ঠিক হয়ে যায় ঈদের দিনক্ষণ। সে অনুসারে পশু কেনাসহ ঈদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই। কোরবানি দেওয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কোরবানি করার বিধান রয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা মানুষের ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।’

 
Link copied!