শহরের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে এয়ার কন্ডিশন

নাজিফা ফারহাত

মে ১০, ২০২১, ১০:৫৮ পিএম

শহরের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে এয়ার কন্ডিশন
[youtube-video]https://www.youtube.com/watch?v=D6Mh0j3ZB-U[/youtube-video] 

গত ২০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়, দেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহরগুলোতে একই পরিবর্তন দেখা গেছে। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে অতিরিক্ত এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করা। নেদারল্যান্ডসের ভিত্তিক এলসেভিএর Sustainable Cities and Society জার্নালে একদল গবেষকদের গবেষণায় শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এর কারনের এই তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা বিভাগীয় শহরে এ সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

শহরের তাপমাত্রা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে

২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিদিনের দিন ও রাতের তাপমাত্রার গড় বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে, গত ২০ বছরে গড়ে প্রতিটি শহরের তাপমাত্রাই আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে। দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা, যেখানে কোন কোনদিন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্তও বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে, রাতের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল চট্টগ্রামে। 

Heat

রাতে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বেশি হয়।

এয়ার কন্ডিশনারের দুষ্টুচক্রে নগরবাসী 

গবেষণাটি বলছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক কার্যকলাপ যেমন ব্যাপক হারে শিল্পায়ন, এয়ার কন্ডিশনিং ও পরিবহন ব্যবস্থা বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইড বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে।  বর্তমানে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক ভবনে যত্রতত্র এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়। এই এয়ার কন্ডিশন ঘরকে ঠান্ডা রাখতে বাহিরে প্রচুর পরিমান তাপমাত্রা নির্গমন করে থাকে। আর যেহেতু তাপমাত্রা বাড়ছে সেই দিকে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে একটা দুষ্টুচক্রে নিমজ্জিত হচ্ছে নগরবাসী।

সবুজের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং বহুতল ভবনের অসমান উচ্চতা ও নকশায় বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া না থাকাও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।  এছাড়া আমাদের নতুন ফাঁকা ইটের ব্যবহারের ফলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে নেই বৈশ্বিক প্রভাব

তবে জলবায়ু পর্বির্তনের কারণে চূড়ান্ত ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক কোন প্রভাব নেই বলেই জানালেন গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান। 

 “ম্যাসিভ আকারে সবুজায়ন প্রকল্প ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ সম্ভব না। আর শুধু গাছ লাগালেই হবেনা, সবুজায়নকে আমাদের জাতীয় গৃহায়ন নীতির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেসব জায়গা বেশি পরিমাণে হিটওয়েভ গ্রহণ করছে সেগুলোতে পরিকল্পনা অনুযায়ী চিরহরিৎ গাছ লাগাতে হবে। সর্বোপরি আমাদের জনগণকে এখনই এ সংকটের গুরুত্ব অনুধাবন করে পরিবেশবান্ধব লাইফস্টাইল বেছে নিতে হবে বলে জানান তিনি।

বিশ্বজুড়ে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী যেখানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে রাখার সর্বাত্মক জোড় দেয়া হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা মাত্র দুই দশকেই ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাওয়া ভবিষ্যতের জন্য কড়া সতর্কবার্তাই দিচ্ছে।

অসমান ভবনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি না হওয়ার দাবি

তবে অসমান ভবন ও ফাঁকা ইটের কারনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারন মানতে নারাজ নগর পরিকল্পনাবিদ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন-সংক্রান্ত উপকমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, বর্তমানে কাঁচের ভবন ও বিভিন্ন তাপ বিকিরনকারী পদার্থ দিয়ে ভবন নির্মান করার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে এয়ার কন্ডিশনারের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তিনিও একমত প্রকাশ করেছেন। 

iqbal habib

যত্রতত্র এয়ার কন্ডিশন ও কাঁচের ভবনের কারনে শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে : ইকবাল হাবিব

Link copied!