সাংবাদিক শামসুজ্জামানের জামিন মঞ্জুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ৩, ২০২৩, ০৮:৪৭ পিএম

সাংবাদিক শামসুজ্জামানের জামিন মঞ্জুর

রাজধানীর রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় কারাগারে আটক দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

সোমবার (৩ এপ্রিল) এর আগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ জামিন আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার। দুপুরে শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর।

এদিকে একই মামলায় গতকাল রোববার (২ এপ্রিল) বিকেলে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। সকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাজধানীর রমনা থানায় করা এ মামলায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যান’সহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) শামসুজ্জামানকে  শামসকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আবু আনছার। এ সময় আসামিপক্ষে তাঁর আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে শামসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালত।

এর আগে উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের দায়ে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। 

বুধবার (২৯ মার্চ) গভীর রাতে মামলাটি করেন আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছারকে। এ অভিযোগে তেজগাঁও থানার মামলায় গ্রেফতার করা হয় প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় জাকির হোসেন নামে এক দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম? বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও, ছবি দেয়া হয় একটি শিশুর। ১৭ মিনিটের মাথায় নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটে প্রথম আলো। খবরটি সংশোধন করে তারা। কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই একটি বেসরকারি টেলিভিশন বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনটিতে যা পরিবেশন করা হয়েছে, সেটি ভুল। শিশু জাকির হোসেন আসলে দিনমজুর নয়, একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আর তার নাম সবুজ। টাকার বিনিময়ে তার ছবি তোলা হয়েছে। 

বহুল আলোচিত ওই ছবি প্রকাশের দুদিন পর, বুধবার (২৯ মার্চ) ভোরে প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেফতার করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাশের আমবাগান এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি। ওই বাড়ির মালিক ও শামসের সহকর্মীরা জানান ২৮ মার্চ গভীর রাতে ৭ থেকে ৮ জনের একটি দল সিআইডি পরিচয়ে শামসের বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর জাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ সিআইডি পরিচয় দেওয়া ওই দলটি শামসকে নিয়ে বটতলার নুরজাহান হোটেলে সেহরি খান। এরপর ভোর ৫টার দিকে শামসসহ তারা পুনরায় বাসায় ফিরে তল্লাশি চালায়। একপর্যায়ে শামসের ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়।

শামসুজ্জামান শামস ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামের ছোট ভাই শামস।

Link copied!