সূর্যসেন হলে শিক্ষার্থী নির্যাতন: ইনহেলারও নিতে দেওয়া হয়নি ভুক্তভোগীকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

নভেম্বর ৮, ২০২১, ১০:০১ পিএম

সূর্যসেন হলে শিক্ষার্থী নির্যাতন: ইনহেলারও নিতে দেওয়া হয়নি ভুক্তভোগীকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের দুই আবাসিক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে গলাটিপে ধরলে তাদের একজনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ইনহেলার নিতে চাইলে সেই সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগীদের একজন। সোমবার (০৮ নভেম্বর) রাত ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্তরা হলেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সিফাত উল্লাহ সিফাত এবং আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙুয়েজেস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান অর্পণ। তারা দুজনেই ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী।

অভিযুক্তরা নির্যাতনের পরে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে 'হল থেকে বাহির না হলে মাইরা টাংকির উপরে ফালাই রাখমু' বলে হুমকি দেন বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।

নির্যাতনের স্বীকার দুই শিক্ষার্থী হলেন, সূর্যসেন হলের সাবেক হল সংসদের সদস্য নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম এবং থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম জানান, রাত দুইটার দিকে সিফাত ও ইমরান এসে আমাদের রুম থেকে ডেকে ৩৫১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে সেখানে আরও কয়েকজন ছিলো। ডেকে নিয়ে গিয়ে তারা আমাদের প্রায় দু ঘণ্টার মতো অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। একপর্যায়ে সিফাত আমাদের স্টাম্প দিয়ে আঘাত করে। গলাটিপে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আমি অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের অনুরোধ করি আমাকে ইনহেলার নিতে দিতে। কিন্তু তারা আমায় সেটিও নিতে দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘‘সিফাত আমাকে তার জুনিয়র হয়েও হল সংসদের সদস্য হয়েছি বলে, আমার জেলা সংগঠনের সেক্রেটারি হয়েছি বলে, বেয়াদবি করেছি ইত্যাদি কথা বলে গালাগালি করে অমানুষিক নির্যাতন করে। এর পর সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে 'আজকের মধ্যে হল থেকে বের না হইলে তোদেরকে মাইরা হলের টাংকির উপরে ফালাই রাখমু'। আমরা এখনো হলের বাহিরেই অবস্থান করছি। ভেতরে যেতে সাহস পাচ্ছি না।’’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিফাত উল্লাহ সিফাত মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আরিফ ২০১৮-১৯ সেশনের এক শিক্ষার্থীকে হল দেখে বের হওয়ার হুমকি দিয়েছিলো। কেন সে হুমকি দিয়েছিলো এটি জানতেই ওকে রাতে রুমে ডেকেছিলাম। ওদের গায়ে কোনো হাত তোলা হয়নি। সামনে ছাত্রলীগের হল সম্মেলন, মূলত আমার ইমেজ নষ্ট করতেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হল প্রাধ্যক্ষের সাথে আমার কথা হয়েছে। এ বিষয়টি তিনি দেখবেন বলেছেন। যদি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে নিব।

অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান অর্পণের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কল দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি এবং মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালে তারও কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেট ইমরান সাগরে জানান, এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা দুজনেই একই জেলার। যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমিও তা সমর্থন করব।

এ বিষয়ে সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। আমি কিছু সময় নিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে দিচ্ছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি আমি শুনলেও এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে আমরা হল প্রশাসনের সাথে কথা বলে তাদেরকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।

উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১৮ সালে এই দুই শিক্ষার্থীসহ আরও একজনকে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিলো। এ ছাড়া তারা দুজনেই ছাত্রলীগের সূর্যসেন হল ইউনিটের ক্যান্ডিডেট ইমরান সাগরের অনুসারী। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের উপর রাতভর এমন অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।

Link copied!