স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি : আপাতত বন্ধ তেঁতুলতলা মাঠ নির্মাণকাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৮, ২০২২, ০৩:২০ এএম

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি : আপাতত বন্ধ তেঁতুলতলা মাঠ নির্মাণকাজ

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান পরিবেশ আন্দোলন, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এরপরপরই রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানার দেয়াল নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। উন্মুক্ত মাঠে শিশুরা খেলাধুলা করছে। উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে মাঠজুড়ে। মাঠের এক পাশের একটি দেয়ালে নতুন করে লেখা হয়েছে, ‘মাঠে শিশুরা খেলবে, থানা চাই না।’

এদিকে তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে সরব এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিকেরা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ের সমাধান করতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ জন্য বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ পাঁচ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বিকেল ৩টার দিকে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, থানা যেমন জরুরি বাচ্চাদের খেলার মাঠও জরুরি। আশা করি আলোচনার মধ্য দিয়ে জটিলতার অবসান হবে। মাঠে অবকাঠামো নির্মাণ আপাতত বন্ধ হবে কি-না এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে না। দেয়াল নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি নিয়ে তিনি ডিএমপির সঙ্গে কথা বলবেন।

তেঁতুলতলা কখনোই মাঠ ছিল না উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটি একটি খালি জায়গা ছিল। পুলিশ তা কিনে নিয়েছে। এখন এটি পুলিশের নিজস্ব সম্পত্তি। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যেহেতু এটি নিয়ে স্থানীয়রা আন্দোলন করছেন, তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। মন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আজ আমাকে একটি আবেদন দিয়ে গেছেন। তাদের সে আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আমি বিকল্প জমি খোঁজার জন্য বলেছি। আমরা সবাই মিলে একটি বিকল্প জায়গা খুঁজে পেলে হয়তো সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। তিনি নিজেও বাচ্চাদের খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাকে বলেছি- থানাভবন করতে হলে বিকল্প কোনো জমিতে করা যাবে। আমরা একটি জায়গা তাকে দেখিয়েও দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জায়গাটি যেহেতু পুলিশ কিনে নিয়েছে। ফলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।

তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে আজ একদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন, অন্যদিকে পুলিশি প্রহরায় মাঠে পুরোদমে থানা ভবনের দেয়াল নির্মাণ হতে দেখা গেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বেলা পৌনে ৩টার দিকে তেঁতুলতলা মাঠে বৃক্ষরোপণ করেছেন স্থানীয় প্রতিবাদী বাসিন্দারা। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীসহ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের যে দিকটা খোলা আছে সেদিকে পাঁচ ইঞ্চি গাঁথুনির চার ফুট উচ্চতার দেয়াল উঠে গেছে। একজন শ্রমিক বলেন, চার ফুট দেয়ালের উপর এক ফুটের মতো ১০ ইঞ্চির ঢালাই হবে। সেই ঢালাইয়ের ওপর দেওয়া হতে পারে কাঁটাতার বা কাঁচ। যাতে দেয়াল ডিঙিয়ে মাঠে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।

মাঠের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পোশাক পরিহিত ২০ জনের মতো পুলিশ সদস্য দেখা গেছে। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য মাঠের মধ্যে এবং আশপাশে রয়েছেন। মাঠের পাশে পুলিশের ২টি ভ্যান দেখা গেছে। উল্লেখ্য, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবিতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলছে। এরইমধ্যে গত রোববার আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না মাঠে নির্মাণকাজের দৃশ্য ফেসবুকে লাইভ করলে তাকে ও তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের কলাবাগান থানায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবি জানিয়ে দুটি আলাদা বিবৃতি দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।

Link copied!