হিরো আলম: ডিশ-সিডি বিক্রেতা থেকে ভাইরাল কন্টেন্টের স্রষ্টা, যেভাবে এমপি হবার দৌড়ে ছিলেন

সাদিয়া সুপ্তি

ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ০৩:০৭ এএম

হিরো আলম: ডিশ-সিডি বিক্রেতা থেকে ভাইরাল কন্টেন্টের স্রষ্টা, যেভাবে এমপি হবার দৌড়ে ছিলেন

ভঙ্গুর দেহ, শুদ্ধ উচ্চারণের অভাব বা আর্থ-সামাজিক পরিবেশ – কোন কিছুই যেন থামাতে পারেনি তাকে। মূলসারির সিনেমাতে না পারলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ভাইরাল। তাঁর পুরো নাম আশরাফুল আলম। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত হয়েছেন ‘হিরো আলম নামে। আর তার হিরো পরিচয় যেন মানতে নারাজ অনেকেই। একসময় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে তার নামের সাথে হিরো শব্দটিও ফেলে দিতে বলেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।

হিরোর আগে তার নামের সাথে ছিল ডিশ আলম। আর এবার বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ করা শূন্য আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে দুই আসনে এমপি আলম হওয়ার দৌড়েও নামেন তিনি। তবে বগুড়া-৪ আসনে মাত্র ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান হিরো আলম।

যেভাবে হিরো আলমের উত্থান

আটত্রিশ বছর বয়সী আলম রাতারাতি দেশি-বিদেশী গণমাধ্যমে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তবে ১০ বছর আগেও বগুড়ায় নিজ গ্রাম  এরুলিয়াতে সিডি বিক্রির কাজ করতেন। পাশাপাশি স্যাটেলাইট টিভিসংযোগ, যেটি ডিশ লাইন পরিচিত সেই ব্যবসাও করেন কিছু দিন। তখনই তাকে সবাই ডিশ আলম বলে ডাকতো।

তবে ২০১৫ সালে ডিশ ব্যবসা চলাকালীন সময় শখের বশে সঙ্গীত ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন। আর তিনি বেছে নেন ইউটিউবকে। বর্তমানে তার ইউটিউব চ্যানেলে ১৫ লাখেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

বছর গড়াতে না গড়াতেই ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তার ভিডিওগুলো ট্রল এবং মিম এর বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে রাতারাতি তিনি ভাইরাল বনে যান।

তারপর থেকে ভারতের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলো যেমন- বিবিসি হিন্দি, জি নিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড-ডেসহ তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার ফলে হিরো আলম ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহার কারীদের মাঝে খুব আলোচিত হন। ২০১৮ সালে ইয়াহু ইন্ডিয়ার এক জরিপ অনুসারে ভারতীয় অভিনেতা সালমান খানের চেয়েও হিরো আলমকে বেশিবার গুগলে অনুসন্ধান করা হয়েছিল। ২০১৮ সাল অনুসারে গুগল সার্চ ট্রেন্ডে বাংলাদেশে দশম অবস্থানে ছিল হিরো আলম।

২০১৭ সালের ১১ আগস্ট হিরো আলম অভিনীত প্রথম ছবি ‘মার ছক্কা’ মুক্তি পায়। এছাড়া বেশকিছু বিজ্ঞাপন চিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

তবে চলচ্চিত্র জগতও হিরো আলমকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি চলে এলেন গানের ভুবনেও।  তাও যেন তেন গান নয়। নাড়াচাড়া দিয়েছেন রবীন্দ্র-নজরুল নিয়েও। এতে ব্যর্থ হলেও হিরো আলম নিজের প্রতিভাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে। গেয়েছেন বেশ কয়েকটি বিদেশী ভাষার গান।

তবে তার এহেনও প্রতিভার পথে বাধ সাধলো পুলিশ। একসময় নেওয়া হলো পুলিশের হেফাজতে, করা হলো জেরা। তাঁকে বদলে ফেলতে বলা হলো ‘হিরো আলম ‘ নামটি।

শুধু বেসুরো কণ্ঠ আর চেহারার কারণেই কি তাকে এতো অবহেলা – মানতে পারলেন না আলম। মুখ খুললেন গণমাধ্যমে। দেশি-বিদেশী গণমাধ্যমে হইচই ফেলে দিলেন। ফলে তার পরিচিতি দেশের গন্ডি ছেড়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়লো।

এদিকে, গত কয়েক বছরে আয়-উপার্জন বেড়েও তিনি আর্থিকভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেন। তার ইচ্ছার শেষ এখানেই না। স্বপ্ন দেখা শুরু করেন নেতা হওয়ার – জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৪ আসনের মনোনয়ন ফরম কেনেন তিনি। দলের তৎকালীন কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার সঙ্গে মনোনয়ন ফরম হাতে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে শারীরিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল হিরো আমলকে।

২০১৮ সালেও হিরো আলম বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করে জামানত হারিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বগুড়া-৪ আসনে মাত্র ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। পাশাপাশি তিনি ‘ভোটারদের চাওয়ার মুখে’ বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকেও প্রার্থী হন হিরো আলম।

Link copied!