হেফাজতের বিষয়ে সাবধান না হলে তালেবানী অভ্যুত্থান দেখব: মেনন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৪, ২০২১, ১০:৩৪ পিএম

হেফাজতের বিষয়ে সাবধান না হলে তালেবানী অভ্যুত্থান দেখব: মেনন

হেফাজতের বিষয়ে সাবধান না হলে অচিরেই বাংলাদেশে তালেবানী অভ্যুত্থান দেখতে হবে এবং সেখানে বিএনপিসহ মান্না-নুরুরা সবাই শামিল হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। আজ সোমবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখার সময় এই উক্তিটি করেন তিনি। এ সময় বাজেটের সমালোচনা করে তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসারে এই বাজেট তৈরি করা হয়নি।

হেফাজতের উত্থানের প্রসঙ্গ টেনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, 'এই সংসদে আমি কওমী মাদ্রাসাকে শিক্ষার মূল ধারায় নিয়ে আসার প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলাম, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা ‘বিষবৃক্ষ’ লালন করছি কিনা। তার প্রতিক্রিয়ায় হেফাজত মিছিল করে আমার ফাঁসী চেয়েছে। এই সংসদে জাতীয় পার্টির এমপি আমি ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গেয়েছি বলে উপহাস করেছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের সমর্থনে তাদের ভারতের দেওবন্দের অনুসারী বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে বাবুনগরী পাকিস্তানী মাদ্রাসার ছাত্র। ইজাহার হুজির সদস্য ‘আফগান যুদ্ধ ফেরত তালেবান’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডবের নায়ক সাজাদ্দুর রহমান, মোবারক মোল্লা সবাই তালেবান অনুসারী, বাংলাদেশে তালেবানী অভ্যুত্থান ঘটাতে চায়। তারা এখন কমিটি পরিবর্তন করে ধোঁকা দিচ্ছে।'

এদিকে বাজেটের সমালোচনা করে রাশেদ খান মেনন বলেন, অর্থমন্ত্রী তার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে ‘অর্থনীতির ড্রাইভিংসিটে ব্যক্তিখাত’কে বসাবেন বলে বলেছেন।  অথচ সংবিধানের ১৩ (ক) বিধিতে স্পষ্ট করেই রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের প্রাধান্যের কথা বলা হয়েছে। জিয়া-এরশাদ যা করতে পারে নাই অর্থমন্ত্রী সে কথাই জোরগলায় বললেন। পিপিপি-র ঘোমটা ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে তিনি বলেছেন। আসলে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে অর্থনীতি সংবিধানের উল্টো পথে চলছে। তাহলে বরং খোলামেলাই ঘোষণা দিন বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত এই সংবিধান অচল।

তিনি আরো জানান, অর্থনীতির উদারীকরণ অর্থনীতিতে যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে সে নিয়ে প্রতিবারই বলি। অর্থমন্ত্রীরা গ্রাহ্য করেন না। এই করোনাকালে বৈষম্য কোথায় দাঁড়িয়েছে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোটিপতির একাউন্ট সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়। এই করোনাকালে কোটিপতির অ্যাকাউন্ট ১০ হাজার বেড়েছে, আর কৃষকের একাউন্ট পাঁচলাখ কমেছে।

এ সময় স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির সমালোচনা করে ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে টেনে মেনন বলেন, বাংলাদেশ প্রথমেই টিকা সংগ্রহ করে সফলভাবে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু সরকারী ক্রয় নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকারি টাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টিকা সরবরাহের পরিণতি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। ভারত টিকা রফতানি বন্ধ ঘোষণার আগেই মার্চ মাসে ৫০ লাখ ডোজের জায়গায় ২০ লাখ ডোজ এসেছিল। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক স্বার্থে একক উৎসের উপর নির্ভরতা, ঐ স্বার্থবুদ্ধিতা থেকে চীন ও রাশিয়ার টিকা, এমনকি দেশের বায়োটেকের টিকা ট্রায়াল করতে দেয়া হয় নাই। ফলে এখন সমস্ত টিকা কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে। আগামী মাস গুলোতে টিকা আসবেই এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেনা। পররাষ্ট্র মন্ত্রী সবার আশ্বাস সম্পর্কে সরাসরি হতাশাব্যক্ত করেছেন।

তিনি আরো জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) স্পষ্ট বলেছে সংক্রমণ রোধে ৭০% ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হবে। এখন ১২ কোটি মানুষের জন্য টিকা ব্যবস্থা করতে না পারলে করোনা সংক্রমণ রোধ হবে না। এই টিকা সরকারকেই সংগ্রহ করতে হবে। কোন মধ্যস্বত্বভোগী অথবা বাণিজ্যিকিকরণ জায়গা নাই। দেশে টিকা উৎপাদনের যে সক্ষমতা আছে তাকে কাজে লাগাতে হবে।

এ সময় রাশেদ খান মেনন করোনাকালে প্রণোদনা সরবরাহ ও স্বাস্থ্য খাতের গত বছরের বাজেট খরচ না হওয়ারও সমালোচনা করেন। তিনি প্রান্তিক দরিদ্রদের হাতে যত দ্রুত সম্ভব প্রণোদনার অর্থ পৌঁছে দেয়ারও দাবি জানান।

Link copied!