শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে এখন তিনটি পথ খোলা

বিবিসি

আগস্ট ৩০, ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম

শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে এখন তিনটি পথ খোলা

শেখ হাসিনা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তার ডিপ্লোম্যাটিক বা অফিসিয়াল কূটনৈতিক পাসপোর্ট কার্যকর ছিল এবং বিশেষ এই লাল পাসপোর্টের সুবাদে অন্তত ৪৫ দিন বিনা ভিসায় ভারতে অবস্থান করতে পারার কথা তার। কিন্তু সম্প্রতি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের নামে ইস্যু করা সব কূটনেতিক পাসপোর্ট ‘রিভোকড’ বা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

২৬ দিন হতে চলল ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। চরম গোপনীয়তা ও কড়া সুরক্ষা বলয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদির সরকার আপাতত তার থাকার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই, কিন্তু তার সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানায়নি তারা।

এরই মধ্যে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতে এখন তার অবস্থানের বৈধ ভিত্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ-অবস্থায় দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানায়, এ-মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সামনে কার্যত তিনটি ‘অপশন’ বা সমাধানের উপায় রয়েছে।

প্রথমত, বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনও দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।

দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় বা পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম দিয়ে ভারতেই রেখে দেয়া। ধারণা করে হচ্ছে যেভাবে তিনি এখন সেখানে অবস্থান করছেন।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন’। যদিও এটা এখনও বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভারতের কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ মনে করেন, কিছুদিন পর উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের একটি চেষ্টাও করতে পারে দিল্লি কর্তৃপক্ষ। কেননা রাজনৈতিক দল বা শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী বা সভাপতি হিসেবে তিনি দেশে ফিরে প্রবীণতম দলটির হাল ধরতেই পারেন, যেভাবে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন তিনি।

এর মধ্যে ভারতের কাছে অপশন হিসেবে প্রথমটাই যে ‘সেরা’- সেটা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ তিনি ভারতে রয়ে গেলে সেটা আগামী দিনগুলোতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তারা। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনও অনুরোধ আসে- সেটা যে কোনও না কোনও যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত। কাজেই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে ভারতের জন্য কোনও বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।

Link copied!