মে ১৮, ২০২৫, ০১:৫১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসলে, বামপন্থি দলগুলো জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
এক্ষেত্রে বিক্ষোভ, সভা-সামাবেশের পাশাপাশি চট্টগ্রাম অভিমুখে ‘জনগণের লংমার্চ’ কর্মসূচি দিতে তারা বাধ্য হবেন বলেও জানিয়েছেন প্রিন্স।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বন্দর এবং করিডোর দেওয়া নিয়ে সরকার যে জোরালো অবস্থান নিয়েছে, এই বিষয়টিকে তারা স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের ‘পরিপন্থি অবস্থান’ বলে মনে করছেন।
প্রিন্স বলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোট অনেক আগে থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম জোট, বাংলাদেশ জাসদ, ঐক্য ন্যাপ এবং অন্যদের সাথে যুগপৎ ধারায় বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন এবং সেটা চলমান আছে।
“এই আন্দোলনকে আমরা আরও বেগবান করতে চাই।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘হৃদপিণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে এর আধুনিকায়নে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই বন্দরের উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায় খোলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের পর রাখাইন অঞ্চলটি এখন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড থেকে সেখানে যোগাযোগের পথ বন্ধ রয়েছে।
এই অবস্থায় রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিচ্ছে তার পথ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্ত হতে যাচ্ছে- এমনটি গত ৮ এপ্রিল জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। সরকারের এই ‘নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এসেছে বিএনপির পক্ষ থেকেও।
মানবিক করিডর ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশিদের যুক্ত করা নিয়ে প্রিন্স বলেন, “এর বিরুদ্ধে আমরা মনে করি আমাদের দুই দল না, বাংলাদেশের শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়েই যদি সরকার বিরত না হয়, আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
এসবের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের মন্তব্য করে প্রিন্স বলেন, “করিডোর বা বন্দর তো তাদের দায়িত্ব না, এটা রেগুলার সরকারের দায়িত্ব। আমরা কিছুদিন আগে সরকারকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। সরকারের এদিকে হাত দেওয়াই উচিত না।”
সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না দাঁড়ালে ফিরে দেশের বামপন্থি যে জোটগুলোসহ, এর বাইরেও আরো কয়েকটি পক্ষে অনেকের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রিন্স।
আন্দোলনের কোনো রূপরেখা হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা সভা করলাম কাল, আজ ফ্যাসিবাদবিরোধীরা করবে। আমাদের চট্টগ্রামে সভা চলবে। আমরা এখন মতবিনিময় পর্বে আছি। সরকার যদি এখান থেকে না হটে, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, এমনকি চট্টগ্রাম অভিমুখে ‘জনগণের লংমার্চ` এই কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব।”
এর আগে শনিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার এক যৌথ সভা বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মানবিক করিডোর, চট্টগ্রামে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল ও ইপিজেডে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির উদ্যোগ এবং স্টার লিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিলসহ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার নানা ধরনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সভায় বক্তব্য রাখেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, ফ্যাসিবাদী বিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ নাসু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সমন্বয়ক মাসুদ খান, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য মনজুর আলম মিঠু।