আজ ৩ আগস্ট। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, বাম রাজনীতির পুরোধা, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক নির্মল সেনের ৯১তম জন্মদিন আজ। নির্মল সেন বা নির্মল কুমার সেন গুপ্ত ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের ঠিক আগে তার পুরো পরিবার ভারতের কলকাতা চলে গেলেও তিনি বাংলাদেশেই থেকে যান।
শিক্ষা জীবন
নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় তার ফুফুর বাড়িতে। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করেন। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখাপড়া করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
রাজনৈতিক জীবন
বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই বামধারার রাজনীতিকের স্কুলজীবনে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৪২ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় মহাত্মা গান্ধীর ওেই আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্কুল গেটে ১৬ দিন ধর্মঘট করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি প্রগতিশীল সংগঠন ‘অনুশীলন সমিতি’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৪৪ সালে রেভ্যুলিউশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টিতে (আরএসপি) যোগ দেন। নির্মল সেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে বিলুপ্ত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রাজনৈতিক দল শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্মল সেল দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালণ করেছেন। ১৯৮৩ সালের এপ্রিলে নির্মল সেনের শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে গঠিত ১৫ দলীয় জোটে যোগ দিয়ে এরশাদ শাসনামলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমকা পালন করে।
সাংবাদিকতা
১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। পরবর্তীকালে প্রেস ট্রাস্টের অধীনস্থ দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এতেই যুক্ত ছিলেন।বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা করেছেন।
উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি
সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখক হিসাবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তার লেখা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ, মানুষ সমাজ রাষ্ট্র, বার্লিন থেকে মস্কো, মা জন্মভূমি, আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ, আমার জবানবন্দি উল্লেখযোগ্য।স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদেশের সমকালীন সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির প্রক্ষিতে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় লেখা ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ নামক একটি উপ-সম্পাদকীয় তাকে লেখক হিসেবে প্রভূত খ্যাতি ও পরিচিতি দান করে।
নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং চিকিৎসা পরবর্তী সময় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দীঘিরগ্রামে নিজ বাড়ীতেই থাকতেন। তিনি ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নির্মল সেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হয়।