১৯৪২ সালের ঘটনা। ভারতের কলকাতা আলীয়া মাদরাসা পরিদর্শনে আসেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক। ওইদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। ওই অনুষ্ঠানে ১১ বছরের এক কিশোর গাইলেন-‘সদা মন চাহে মদিনা যাবো।’ তার গান শুনে শিশুর মতো কেঁদে উঠলেন শেরে বাংলা। যার গানে শেরে বাংলা কেঁদে উঠলেন, তিনি আর কেউ নন। তিনি আব্দুল আলীম-লোক সঙ্গীতকে যিনি স্থান দিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই। ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্ম নেওয়া বাংলা লোকসঙ্গিতের এই অমর শিল্পী বাল্যকাল থেকেই সঙ্গীতের প্রবল অনুরাগী ছিলেন। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। অন্যের গাওয়া গান শুনে গান শিখতেন। আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন। এভাবে কিশোর বয়সেই তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৪৩ সালের ঘটনা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আব্দুল আলীমের গানের প্রথম রেকর্ড হয়। গান দুটি ছিল- "তোর মোস্তফাকে দে না মাগো" এবং "আফতাব আলী বসলো পথে"। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার লোক সঙ্গীতের এক অবিসংবাদিত-কিংবদন্তি পুরুষ।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ঢাকায় চলে আসেন তিনি। শুরু করেন বেতার শিল্পী হিসেবে কর্মজীবন । ঢাকা সঙ্গীত কলেজে লোকগীতি বিভাগে কিছুদিন অধ্যাপনাও করেন। লাহোরে অল পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্সে অসাধারণ নৈপূণ্য দেখিয়ে ৫টি গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন লোকসঙ্গিতের এই বিস্ময়কর প্রতিভাবান শিল্পী।
আবদুল আলীম মারফতি- মৃর্শিদি গানে ছিলেন অদ্বিতীয়। তার গাওয়া ‘ওহলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ, পাখিটি ছাড়িল কে? গানটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি প্রায় পাঁচশ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এসবের মধ্যে কিছু গান তাঁর নিজের রচনা।
প্লেব্যাক সিংগার হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন আব্দুল আলীম। পূ্র্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ‘মুখ ও মুখোশ’ সবাক চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই তার প্লেব্যাক জীবনের শুরু। তিনি শতাধিক চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আর গ্রামোফোন রেকর্ডসে ধারণকৃত তার গানের সংখ্যা তিন শতাধিক। ১৯৭৪ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত সুজন সখি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কন্ঠশিল্পী হিসেবে তিনি জাতীয় পুরষ্কার পান। সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পান জাতীয় পুরস্কার-একুশে পদক।