এপ্রিল ২২, ২০২৩, ১১:৫৩ এএম
‘চলচ্চিত্রের কোনা সীমানা নেই, কোনো গন্ডির মধ্যে থাকতে পারে না। তাই বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রগুলো দুই দেশের সিনেমা পর্দায় দেখানো উচিত।’
কলকাতায় স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কৃার নেওয়ার সময় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী পরীমণি এসব কথা বলেন।
কলকাতার পাঁচতারা হোটেল আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গলে এক ঝলমলে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠঅনে ২০২২ সালের সেরা ১০ ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা দেয় আনন্দবাজার অনলাইন।
আনন্দবাজার অনলাইন নানান পরিসরের কৃতীদের সম্মান জানিয়ে আসছে ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংগীতশিল্পী রূপম ইসলামের উদাত্ত কণ্ঠে ‘ঋকবেদের গানে’ যেন বাঁধা পড়ে অনুষ্ঠানের মূল সুর।
আনন্দবাজার ডিজিটালের প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার বলেন, “আমরা স্বভাবকৌতুক, আমরা বেড়া ভাঙি। কত দূর ভাঙতে পেরেছি, তা বলবেন আপনারা। কিন্তু গত এক বছরে আমাদের পাঠকরা ৩০০ কোটি মিনিট ব্যয় করেছেন আমাদের লেখা পড়ার জন্য। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।”
এরপরই শুরু হয় দুই বাংলার মানুষের মধ্য থেকে ‘বছরের বেস্ট’কে খুঁজে নেওয়ার পালা। আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদক অনিন্দ্য জানা এবং নাট্য পরিচালক-অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তের সঞ্চালনায় ২০২২ সালের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কৃত হন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম পরিচিত মুখ পরীমনি।
এসময় পুরস্কার নিতে মঞ্চে এসে বাংলাদেশের এই অভিনেত্রী বলেন, চলচ্চিত্রশিল্পে আরো এক হয়ে কাজ করা উচিত দুই বাংলার। তিনি আরো বলেন, দুই বাংলার সিনেমা দুই জায়গাতেই দেখানো উচিত।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে পর্দায় আবির্ভাবের পর থেকে গতি কমতে দেখা যায়নি পরীমণির কর্মজীবনে। ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবি দিয়ে পথ চলা শুরু। তার সামনে যাওয়া। একই বছর পর পর মুক্তি পায় ছয়টি ছবি। অল্প সময়েই দেশে মিষ্টি প্রেমের ছবির জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন পরীমনি। ‘আরো ভালবাসব তোমায়’, ‘নগর মস্তান’, ‘রক্ত’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘আপন মানুষ’, ‘সোনা বন্ধু’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘গুণিন’-এর মতো একের পর এক ছবিতে তার মুখ্য ভূমিকায় মুগ্ধ হয়েছেন বহু দর্শক। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পরীমণিকে নিয়ে উৎসাহ গড়িয়েছে কলকাতায়ও। এখন কাজের সূত্রে প্রায়ই কলকাতায় আসেন অভিনেত্রী।
এপ্রসঙ্গে পরীমণি বলেন, “কলকাতাকে আগে বিদেশ মনে হতো। এখন হয় না। এ রকমও হয়েছে, আমার ফ্লাইট আজ। কিন্তু আমি দু-পাঁচ দিন পরে গিয়েছি। পরীমনির হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মোহম্মদ সেলিম এবং টলিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
২০২২ সালের আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’-এ সেরা অভিনেতা হলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। বড় পর্দা থেকে ওটিটি- সর্বত্র বিচরণ তার। কখনো তিনি গোয়েন্দা, কখনো আবার এ কালের খেটে খাওয়া মানুষের মুখ। তার হাতে সেরার সম্মানা তুলে দিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে গত বছর এই সম্মানা পেয়েছিলেন অনির্বাণ।
ঋত্বিককে প্রশ্ন করা হয়, বাংলায় অভিনেতাদের যে নবজাগরণ হয়েছে, অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে কি তা হয়েছে? উত্তরে অভিনেতা বলেন, অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে আমাদের নবজাগরণ আগেই ঘটেছে। এখন যারা কাজ করছেন, তারা সেই ধারা বহন করছেন। নবজাগরণ আমাদের অনেক আগেই ঘটে গেছে।
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বছরভরে সাফল্যে যারা নজর কেড়ে থাকেন, প্রতিবছর ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে তাদেরই পুরস্কৃত করে আনন্দবাজার অনলাইন। পেশায় শিক্ষাকর্মী তিমির মল্লিক গত বছর আনন্দবাজার অনলাইনের খুঁজে নেওয়া ১২ জন ‘অসাধারণ’-এর একজন। তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
যাদবপুরের আপাতত ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এ অধ্যাপিকা হিসেবে কর্মরত দেবশ্রী। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করেন। ‘কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি’ বুঝতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের যে চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সাড়া ফেলেছে বিশ্বজুড়ে। স্বীকৃতিও পেয়েছেন নতুন ধরনের এই উদ্যোগের জন্য। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এ ছাড়া খেলা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন তিতাস সাধু। মেয়েদের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যে তিন বঙ্গকন্যা ব্যাটে-বলে মাঠ কাঁপিয়েছেন, তাদেরই একজন চুঁচুড়ার তিতাস। শিল্পপতি হিসেবে সেরার সম্মানা পেলেন রবি মোদি। লেখিকা হিসেবে সম্মাননা পেলেন ‘টেগোর্স ইউনিভার্সিটি: আ হিস্ট্রি অব বিশ্বভারতী (১৯২১-১৯৬১)’ গ্রন্থের রচয়িতা স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। এছাড়া, রূপটানশিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আর পরিচালক হিসেবে ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ ছবির পরিচালক শৌনক সেনকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।