অক্টোবর ৩০, ২০২১, ১০:৩৩ পিএম
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আজ ও কাল বিশ্রামে থাকবে দুবাইয়ে। ২ নভেম্বর আবুধাবিতে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচ। সেমিফাইনালের আশা শেষ। তাই এখন নিয়মরক্ষার ম্যাচ। সাকিব ও নুরুল হাসানের চোট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কাল আপডেট জানা যাবে। নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন ভিডিও বার্তায় যা বললেন সেটা তুলে ধরা হলো দ্য রিপোর্টের পাঠকের জন্য-
আমরা এখনও বিশ্বকাপের মধ্যেই আছি। আমাদের এখনও মূলপর্বের দুটো ম্যাচ বাকি আছে। ভবিষ্যতে কি করতে হবে, না করতে হবেÑ অবশ্যই তা নিয়ে আমাদের কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে। সেটা আমরা এই বিশ^কাপ শেষ করার পরই করতে চাই। বিশ^কাপের পর হতে যাওয়া পাকিস্তান সিরিজের আগে আমাদের কিছু সময় হাতে থাকবে, তখন আমরা এই চিন্তা-ভাবনটা করব বেশি করে। এই মুহূর্তে আসলে এখন যে দলটা আছে, সেটা নিয়েই ভাবছি। পরবর্তী যে দুটো ম্যাচ আছে, সেটা নিয়েই ভাবছি। ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতই বলে দেবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের কি করা উচিৎ, পাকিস্তান সিরিজের আগে আমরা যে সময়টা পাব, তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
ব্যাটিংটা আসলেই আমাদের ভুগিয়েছে। আমরা কিন্তু ম্যাচগুলোতে জয়ের সুযোগ তৈরি করেছিলাম। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভালো ব্যাটিং করেছিলাম, তাছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারছি না। পারিনি আসলে। এই টুর্নামেন্টে ব্যাটিংয়ে যে প্রত্যাশা ছিল, আমরা তার কাছাকাছি যেতে পারিনি। বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে আমাদের ব্যাটিংয়ে অনেক উন্নতি করতে হবে, যদি আমরা টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে চাই, বড় আসরে ভালো করতে চাই। তাই অবশ্যই ব্যাটিংয়ে আমাদের উন্নতি করতে হবে। আর নিচের দিকেও কিন্তু আমাদের পাওয়ার হিটার দরকার। অন্য দলগুলোতে এমন অনেকেই আছে, যারা ওভারে ১০ থেকে ১২ রান করে তুলতে পারে। এই জায়গায় আমাদের কিছু ঘাটতি আছে, এটা নিয়েও কাজ করতে হবে।
আরেকটা বিষয়, কোনো ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং তো খারাপ হতেই পারে। তবে ফিল্ডিংয়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতেই হবে। ফিল্ডিংটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা যেকোনো ম্যাচেই হোক। বড় আসর হলে তো আরও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে আরও বেশি চাপ থাকে। মিস ফিল্ডিং আসলে দলের ছন্দটাই নষ্ট করে দেয়। তো আমার মনে হয়, আমরা দল হিসেবে ফিল্ডিংয়ে আরও ভালো, আমাদের আরও ভালো ফিল্ডিং করা উচিত। এই একটা জায়গায় আমি আরও অনেক উন্নতি দেখতে চাই ভবিষ্যতে।
আমরা কিন্তু যথেষ্ট ফিল্ডিং অনুশীলন করি। আমার মনে হয়, যখন বড় কোনো আসরে আমরা নামি কিংবা ঘরের মাটিতে খেলি, মনস্তাত্বিক চাপ নিতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই চাপ অনেক সময়ই আমরা নিতে পারি না। তারা সবাই ভালো ফিল্ডার। আমাদের যারা ক্যাচ মিস করেছে, তারা কিন্তু দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। তাই মিস করছেন। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ওই চাপ নিতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের বেশি কাজ করা উচিত। অনুশীলনে তারা কিন্তু যথেষ্টই কাজ করছে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং অনুশীলন আলাদা হলেও ফিল্ডিং অনুশীলনটা কিন্তু সবাইকেই করতে হয়। সুতরাং সেদিকে আমি কোনো ঘাটতি দেখছি না। তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ নেওয়ার চাপ সামলানোর বিষয়টা আমাদের শিখতে হবে ভবিষ্যতে।
আমরা কিন্তু বিশ্বকাপের আগে, একটা বড় বিষয় ছিল যে, দল হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে অনেকগুলো টি-২০ ম্যাচ খেলে এসেছি। আমাদের খেলার সুযোগ আসলে খুব বেশি হয় না। অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড উইকেট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। জয়টা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যেটা দরকার, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য, আমাদের ঘরোয়া যে টুর্নামেন্ট গুলো খেলি, সেখানে ব্যাটিং উইকেট তৈরি করা। আমরা খুব বেশি যখন ম্যাচ খেলি, বিপিএল বা টি-২০ টুর্নামেন্ট খেলি, তখন একই উইকেটে বারবার খেলার জন্য অনেক সময় আমরা ভালো উইকেট পাই না। যার জন্য আমাদের পাওয়ার হিটার তৈরি হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি আপনার সুবিধা নিতে চাইবেন। এটা খুব স্বাভাবিক। আপনি জিততে চাইবেন। কিন্তু আমাদের যদি টি-২০ ফরম্যাটে ভালো করতে হয়, পাওয়ার হিটার তৈরি করতে হয়, আমি মনে করি আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেটগুলো অনেক উন্নতি করতে হবে। যেখানে ২০০-১৮০ রানের খেলা হবে ধারাবাহিকভাবে। আমরা আসলে এটা খুব বেশি পাই না, যখন ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হয়। পাওয়ার প্লে ব্যবহার করা, পাওয়ার হিটার তৈরি করা সেটা খুব বেশি হচ্ছে না।
আমার মনে হয়, আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার যেটা পরবর্তীতে আমরা যখন ঘরোয়া টি-২০ টুর্নামেন্ট খেলবো , তখন যেন ভালো উইকেটে আমরা খেলতে পারি সবসময়।
আসলে সবাই খুব হতাশ। কালকে সবাই খুব হতাশ ছিল। আসলে শেষ ৩টা ম্যাচের মধ্যে, হা ইংল্যান্ডের ম্যাচটায় আমরা ভালো করিনি, বাকি দুটি ম্যাচেই কিন্তু আমরা জয়ের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিলাম। অবশ্যই শেষ ম্যাচটা হৃদয় ভাঙার মতো ছিল। শেষ ম্যাচটা জিততে পারলে কিন্তু মানসিকভাবে আবার আমরা চাঙা হতাম এবং বিশ্বাস পরের দুটি ম্যাচে কাজে লাগতো। এখন আমরা জানি, আমরা সুযোগটা মিস করেছি।
সামনে দুটি ম্যাচ আছে। বিশ্বকাপের ম্যাচ মানে কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাকি দুটি ম্যাচ যেন আমরা ভালোভাবে শেষ করি। হা, সেমিফাইনালের সুযোগ নেই এখন, খুব কম বলাই যায়। কিন্তু আমরা বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ দুটি ভালোভাবে শেষ করতে চাই, জয় দিয়ে শেষ করতে চাই। সেটা আমাদের দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সবাইতো অবশ্যই একটু হতাশ। আজকে আমাদের বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। যেহেতু তিন দিন বিরতি আছে। কালকে আমরা আবার বসবো। অবশ্যই আমাদের তো সামনে অনেক খেলা আছে। বিশ্বকাপে আমরা একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম। সেটা পূরণ করতে পারি নাই। সামনে অনেক খেলা আছে, সেখানে কিভাবে ভালো করা যায়, এই ভুল গুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে কিভাবে আরও ভালো করা যায়, সেটাই আসলে মূলত আলাপ করবো। সেটাই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা।
হতাশ তো অবশ্যই অনেক। অবশ্যই নির্বাচক হিসেবে তো হতাশা কাজ করেই। আমার যদিও মনে হয় আমরা ওয়ানডেতে খুব ভালো একটা দল। টেস্ট ক্রিকেটে কিছুটা উঠা-নামা রয়েছে। টি-২০ ক্রিকেটে আমরা ধারাবাহিক হতে পারছি না। যদিও শেষ তিনটা সিরিজ কিন্তু আমরা জিতেছি। জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড, তিনটা টি-২০ সিরিজ জিতেছিলাম। অবশ্যই এখানে একটা বড় আশা ছিল, বিশ্বকাপে সেটা করতে পারিনি। কিছু কিছু জায়গা নিয়ে আমাদের এখনও ঘাটতি রয়ে গেছে। যে জায়গাগুলো আমরা এখনও উন্নতি করতে পারিনি। সেই জায়গাগুলোতে আমাদের অবশ্যই অনেক উন্নতি করতে হবে। যদি ভবিষ্যতে আমরা বড় আসরে ভালো করতে চাই। তো কিছুটা তো আক্ষেপ আছেই। কিন্তু আমার বিশ্বাস যে যেহেতু আমরা এখন নিয়মিত টি-২০ ক্রিকেট খেলি ভাল কিছু হবে।