সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে আজ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলতে নামছে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে চায় পাকিস্তান। অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দ্বিতীয় ফাইনাল। শেষ চারের লড়াইয়ে ফেভারিটের তকমাটা পাকিস্তানের সাথে। তবে ফেভারিট না হলেও, শেষ চারে শেষ হাসিটা হাসতে চায় অসিরা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের লড়াই।
এবারের আসরে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা এক দল পাকিস্তান। অপরাজিত থাকা দল পাকিস্তান সুপার টুয়েলভে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করা, হাতে মুঠো থেকে ম্যাচ কেড়ে নেয়া এ পর্যন্ত সবই প্রদর্শন করেছে ।
বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রথমবার চিরপ্রতিন্দ্বন্দি ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় পাকিস্তানের। ১০ উইকেটে ব্যবধানে কোহলি-রোহিতদের উড়িয়ে দেয় বাবর আজম-রিজওয়ানরা।
ভারতকে হেসেখেলে হারালেও, নিউজিল্যান্ড ও আফগনিস্তানের বিপক্ষে শেষদিকে চমক দেখিয়ে ম্যাচ জিতে পাকিস্তান। প্রতিপক্ষের হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নেয় তারা। দুই ম্যাচেই ব্যাট টর্নেডো ইনিংস খেলেন আসিফ আলি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে অপরাজিত ২৭ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ বলে অপরাজিত ২৫ রান করেন আসিফ। আফগানদের বিপক্ষে ১৯তম ওভারে চার ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে চমক দেখান তিনি। এই দু’টি অসাধারণ ইনিংসের সুবাদেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’এ অক্টোবরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন আসিফ।
শেষ দুই ম্যাচে পুচকে নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডকে হারাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি পাকিস্তানকে। তাই সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচে সবক’টিতে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে উঠে বাবররা। অর্থাৎ এবারের বিশ্বকাপে একমাত্র অপরাজিত দল পাকিস্তান।
এখন পর্যন্ত এবারের আসরে পাকিস্তানের শতভাগ সাফল্যের পেছনে বড় রহস্য ব্যাটার-বোলারদের ধারাবাহিক পারফরমেন্স। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক বাবর আজম। অধিনায়কত্ব ছাড়াও ব্যাট হাতে সফল তিনি। ৫ ইনিংসের ৪টিতে হাফ-সেঞ্চুরিতে এবারের আসরের সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের মালিক বাবর। এছাড়া বাবরের ওপেনিং পার্টনার মোহাম্মদ রিজওয়ানও আছে তুখোড় ফর্মে। ২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২১৪ রান করেছেন তিনি। অন্যান্য ম্যাচে দুই বুড়ো মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের ভেল্কি তো ছিলই। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ১৮ বলে ৫৪ রানের টনের্ডো ইনিংস খেলেন মালিক।
বোলিং বিভাগে দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হাসান রউফ সেরা ফর্মে আছেন। আফ্রিদি ৬ ও রউফ ৮ উইকেট শিকার করেছেন। দুই স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান রান আটকে প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। এ পর্যন্ত ইমাদ ৪টি ও শাদাব ৫টি উইকেট শিকার করেছেন।
২০০৭ সালে প্রথম আসরের ফাইনালে উঠলেও ভারতের কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। তবে ২০০৯ সালে ঠিকই শিরোপা ঘরে তুলে তারা। এরপর চার আসরে দু’বার সেমিফাইনাল খেললেও, ফাইনালে উঠতে পারেনি পাকিস্তান।
এবার ফাইনালে উঠার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না পাকিস্তান, বললেন রিজওয়ান। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা পারফরমেন্স, ফাইনালে ওঠার যোগ্য দল আমরা। এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না।’
অন্য দিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একবারই ফাইনাল খেলার সৌভাগ্য হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। সেটি ২০১০ সালের আসরে। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরটি স্মরনীয় করে রাখতে পারেনি অসিরা। তবে এবার সেই খড়া কাটাতে চায় অস্ট্রেলিয়া।
সেই লক্ষ্যে সুপার টুয়েলভে ৫ ম্যাচেই ৪টিতে জিতে ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে সেমিফাইনালে নাম লেখায় অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য গ্রুপ-১এ ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্টও সমান ৮ ছিলো। কিন্তু নেট রান রেটে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় সেমিতে উঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।
সুপার টুয়েলভে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। শুধুমাত্র ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চই ব্যক্তিগত তিন অংকে নিতে পারেন। ২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫ ইনিংসে ১৮৭ রান করেন ওয়ার্নার। হাফ-সেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরি ছাড়াই ৫ ইনিংসে ১৩০ রান ফিঞ্চের।
ওয়ার্নার-ফিঞ্চের পর ৩ ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮০ রান এসেছে মিচেল মার্শের ব্যাট থেকে। তাই ফাইনালে খেলতে হলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের জ্বলে উঠতে হবে। বিশেষভাবে স্টিভেন স্মিথ-মার্কাস স্টয়নিস-ম্যাথু ওয়েড-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের। ওয়ার্নার রানের মধ্যে ফিরলেও, এখন কথা বলেনি ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট। ৫ ইনিংসে মাত্র ২৯ রান সর্বশেষ আইপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ম্যাক্সওয়েলের।
প্রতি ম্যাচেই জ্বলে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। বিশেষভাবে স্পিনার এডাম জাম্পা। ৫ ইনিংসে ১১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯ রানে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার জাম্পার। তার সাথে পেসার ত্রয়ী জশ হ্যাজেলউড ৮টি, মিচেল স্টার্ক ৭টি ও প্যাট কামিন্স ৪ উইকেট নেন।
সুপার টুয়েলভে করা পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা শেষ চারেও অব্যাহত রাখতে চায় অস্ট্রেলিয়া। শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারাতে হলে, ভালো পারফরমেন্স ছাড়া কোন উপায় নেই বলে দিলেন ওয়ার্নার। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে হবে আমাদের। সুপার টুয়েলভে কেমন করেছে পাকিস্তান, তা সকলেই জানে। তাই ফাইনালে খেলতে হলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন বিভাগেই জ্বলে উঠতে হবে আমাদের।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের পাল্লা ভারী পাকিস্তানের। ২৩ লড়াইয়ে পাকিস্তানের জয় ১২টি। অসিদের জয় ৯টি। ১টি করে টাই ও পরিত্যক্ত হয়।
তবে বিশ্বকাপের মঞ্চের পরিসংখ্যান মতে সমান জয় ও হার পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার। ছয়বারের দেখায় তিনটি করে সমান জয় পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার। এরমধ্যে ২০১০ সালে তৃতীয় বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া।