চলতি টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরে গেছে সুপার টুয়েলভের সব ম্যাচে অপরাজিত থাকা পাকিস্তান। তাদের এই পরাজয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে এবার হতে যাচ্ছে অল অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল। কারণ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ যে প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ড।
কোন বিভাগে কমতি ছিল পাকিস্তানের? ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং? কোন বিভাগেই না। সবাই ভাবছিলেন, এবার বুঝি পাকিস্তান তাদের আনপ্রেডিক্টেবল তকমা ঘুঁচিয়ে ফেভারিট হিসেবেই শিরোপা জিতবে। কিন্তু গল্পের প্লট হঠাৎ করেই বদলে গেল। আর এই বদলে যাওয়া গল্পের নায়ক ম্যাথু ওয়েড। ১৭ বলে ৪১ রানের ইনিংসটাই যে পাকিস্তানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ হাতে পাকিস্তানের স্বপ্নের সমাধি রচনা করেছেন ম্যাথু ওয়েড।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য লক্ষ্যটা কঠিন ছিল। জয়ের জন্য চাই ১৭৭ রান। রান তাড়া করতে নেমেই ধাক্কা খায় অসিরা। মাঝে প্রতিরোধ গড়লেও শেষ করতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নার। অসি ওপেনার ফিরলে এক পর্যায়ে মনে হয়েছিল ম্যাচ থেকে ছিটকে যাবে অস্ট্রেলিয়া। তবে সেটা হতে দেননি মার্কোস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড। পাঁচ উইকেটের জয়ে পাকিস্তানের স্বপ্ন ভেঙে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়া।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৬ রান করে পাকিস্তান। সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। জবাবে ছয় বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। সর্বোচ্চ ৩০ বলে ৪৯ রান করেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।
দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম কয়েক ওভার রান নিতেও ধুঁকছিলেন উইকেটে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। তবে এই জুটিতেই পরে প্রতিরোধ গড়ে অস্ট্রেলিয়া। পাওয়ার প্লেতে ৫২ রান তোলেন দুজন।
সপ্তম ওভারে শাদাব খান ভাঙেন এই শক্ত জুটি। ফিরিয়ে দেন মিচেল মার্শকে। দলীয় ৫২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ২২ বলে ২৮ রান করে ফিরে যান মার্শ।
মার্শ ফিরলেও টিকে ছিলেন ওয়ার্নার। ঠিকই বাকিদের নিয়ে ব্যাটিং হাল ধরেন অসি ওপেনার। কিন্তু ১১তম ওভারে তাঁর প্রতিরোধ ভাঙেন শাদাব খান। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। তবে রিভিউ নিলে বেঁচে যেতে পারতেন অসি ওপেনার। কিন্তু সেটা না করে ৪৯ রানে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার ফেরার পর চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। দায়িত্ব নিতে পারেননি ম্যাক্সওয়েল। তিনি ফেরেন ৭ রানে। এই চাপ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধার করেন মার্কোস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড। এ দুজনের ব্যাটে চড়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। স্টয়নিস করেন ৪০ রান। ম্যাথু করেন ৪১ রান।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে মিচেল স্টার্ককে ফ্লিক করে বাউন্ডারি তুলে নেন বাবর আজম। পরের ওভারে হ্যাজেলউডকে কভার ড্রাইভে আরেকটি চার হাঁকান। এরপর তৃতীয় ওভারেও ম্যাক্সওয়েলকে সুইপ করে মিড উইকেট দিয়ে উড়ান বাবর।
তবে বাবর ছন্দে থাকলেও শুরুতে কিছুটা নড়বড়ে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে বাবরের সঙ্গে সেট হয়ে তিনিও ঝড় তোলেন। দুই ওপেনার মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের পিটিয়ে পাওয়ার প্লেতে তোলেন ৪৭ রান।
ভয়ংকর হওয়া এই জুটি শেষ পর্যন্ত ভেঙেছেন অ্যাডাম জাম্পা। দশম ওভারে লেগ স্পিনার জাম্পার বল লং অন দিয়ে উড়াতে গিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। পাঁচ বাউন্ডারিতে ৩৪ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন বাবর। আর টি-টোয়েন্টিতে ২৫০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন বাবর।
অধিনায়ক ফিরলে কিছুটা রানের গতি কমে যায় পাকিস্তানের। তবে সেই অভাব ভালোভাবেই পূরণ করার চেষ্টা করেন রিজওয়ান। ৪১ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। টি-টোয়েন্টি এটি তাঁর ১১তম অর্ধশতক। ১৮তম ওভারে রিজওয়ানের প্রতিরোধ ভাঙেন মিচেল স্টার্ক। উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলে দেন পাকিস্তানের ওপেনার। চার ছক্কা ও তিন বাউন্ডারিতে ৬৭ করে ফেরেন তিনি।
মাঝে উইকেটে এসে ফিরে যান আসিফ আলী। রিজওয়ান ফিরলে হাল ধরেন ফখর জামান। ৩২ বলে ৫৫ রান করেন ফখর জামান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। ২২ রান খরচায় একটি উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা। ৩০ রান দিয়ে সমান একটি নিয়েছেন প্যাট কামিন্স।