আগস্ট ২৬, ২০২২, ১২:৪২ এএম
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ওষুধের দোকান রাত ১২টায় বন্ধে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ডিএসসিসির মেয়র বলেছেন, রাজধানীর অলিগলিতে ওষুধের দোকান রাত ১২টা পর্যন্ত ও হাসপাতালের পাশে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রাখাই যথেষ্ট।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ডিএসসিসির ওই বিজ্ঞপ্তির সাথে তারা একমত নয়। ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে। সরকারের দুটি পক্ষের এমন বক্তব্যে বিপাকে পড়েছেন ওষুধের দোকানিরা।
ওষুধ দোকানীরা বলছেন, মানুষের বাঁচা-মরার ইস্যু নিয়েও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার এমন পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে বিপাকে পড়েছেন তারা। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমন সমন্বয়হীনতা নজির নেই। নগরের দেখভালের মালিক সিটি করপোরেশন। এখানে ব্যবসা করতে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয় তাদের। সে জন্য ১২টার পর আর দোকান খোলা রাখা যাচ্ছে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে হাবিব মেডিকেল স্টোর। ওই ওষুধের দোকানে দায়িত্বে থাকা হাবিব মিয়া বললেন, মানুষ কখন অসুস্থ হবেন সেটা নিজেও জানেন না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা মেডিকেলে ২৪ ঘণ্টাই রোগী আসছে। এসব রোগীর ভরসাস্থল ওষুধের দোকানগুলো। কিন্তু রাত ১২টার পর দোকান বন্ধ করলে ওষুধ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়বে তারা।
পুরান ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালে টিউমার চিকিৎসা নিতে এসেছেন লায়লা বেগম। তিনি বললেন, মানুষের রোগ নিয়েও মেয়র-মন্ত্রীরা তামাশা করছেন! ওষুধের দোকানে মানুষ সাধে আসে না। খুব প্রয়োজনেই ওষুধের দোকানে আসতে হয় তাদের। একজন মানুষ রাত তিনটার দিকে অসুস্থ হলে ওষুধের জন্য কোথায় যাবেন তারা?
সাধারণ ওষুধের দোকান রাত ১২টা এবং হাসপাতালের নিজস্ব ওষুধের দোকান রাত ২টার পর বন্ধে ২২ আগস্ট সিটি করপোরেশন গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। এই গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু এসব সমালোচনার পরও ডিএসসিসির মেয়র ফজলে নূর তাপস গণবিজ্ঞপ্তি বাস্তবায়ণের বিষয়ে অনড় অবস্থানে আছেন। তিনি বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন, রাজধানীর অলিগলিতে ওষুধের দোকান রাত ১২টা পর্যন্ত ও হাসপাতালের পাশে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রাখাই যথেষ্ট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা আসার আগে এতদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকতো। অনেক দোকানের সামনেই লেখা থাকে ‘২৪ ঘণ্টা খোলা’।
আরও পড়তে পারেন:
ওষুধের দোকানের জন্য রাত ১২টা পর্যন্ত সময় যথেষ্ট: তাপস
তবে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এত দিন এই শহরে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না, তাই আমরা এখন থেকে ঢাকা শহরকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। পৃথিবীর সব দেশই শৃঙ্খলার মধ্যে চলে, আমাদেরও চলতে হবে। তাই পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে এটা পুরোপুরি কার্যকর হবে।’
সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সারাদেশে ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। ওষুধের দোকান নিয়ে সিটি করপোরেশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়নি। রাত ১২টার পর ফার্মেসি বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি।’
জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় জাতীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনে মানুষ চলাচল করেছেন। নতুন মহামারি মোকাবিলার জন্য ছোটখাটো ত্রুটি থাকলেও সরকারের ব্যবস্থাপনায় দেশের জনগণ সন্তুষ্ট। কিন্তু জ্বালানি সাশ্রয়ে সমন্বয়হীনতা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংস্থা ওষুধের দোকান নিয়ে দু’ধরনের নিদের্শনা দিয়েছে। তবে ইস্যুটি নিয়ে সমন্বয় হওয়া দরকার।
আরও পড়তে পারেন:
ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘ওষুধের দোকান খোলা নিয়ে সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে, এটা জাতীয় পর্যায়েও রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে একটি করে ওষুধের দোকান দরকার যেখানে ন্যায্যমূল্যে পর্যাপ্ত ওষুধ পাবেন রোগীর স্বজনরা। এতে রিকশা নিয়ে ওষুধের প্রয়োজনে রোগীর স্বজনদের এখানে-সেখানে দৌঁড়াতে হবে না।’
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘রাত ১২টার পর ওষুধের দোকান বন্ধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। এটা হয় না। আমরা প্রত্যাশা করবো মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’
প্রসঙ্গত, ২২ আগস্ট একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ডিএসসিসি। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে রাত আটটার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার জন্য গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞাপন সেই নির্দেশনাক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় শৃঙ্খলা আনয়ন এবং ঢাকা শহর পরিচালনার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে জনস্বার্থে আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়সীমার মধ্যে রয়েছে- সব দোকান পাট, শপিং মল, মার্কেট, বিপণীবিতান, কাঁচাবাজার, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। একইভাবে সব ধরনের রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান, ও দোকানের রান্না ঘর রাত ১০টা এবং খাবার সরবরাহ রাত ১১টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহসহ চিত্ত বিনোদনমূলক স্থাপনা, প্রতিষ্ঠানগুলো রাত ১১টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সাধারণ ওষুধের দোকান রাত ১২টায় এবং হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান রাত ২টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়তে পারেন:
ওষুধের দোকান বন্ধে সময় বেঁধে দেওয়ায় বিস্মিত অনেকে