ওষুধের দোকান বন্ধে সময় বেঁধে দেওয়ায় বিস্মিত অনেকে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৬:১২ এএম

ওষুধের দোকান বন্ধে সময় বেঁধে দেওয়ায় বিস্মিত অনেকে

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরইমধ্যে জ্বালানি ঘাটতি কমাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষে কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের নতুন সময়সূচি দিয়েছে সরকার। নতুন সূচি অনুযায়ী সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকার অধীনস্ত অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে। আর ব্যাংক খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। 

ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সিটি করপোরেশন জানাচ্ছে, সিটি এলাকার ১লা সেপ্টেম্বর থেকে নতুন নির্দেশনা কার্যকর করা হবে। এরমধ্যে মধ্যরাত থেকে ওষুধের দোকান (ফার্মেসি) বন্ধের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় হাসপাতালগুলোর নিজস্ব ফার্মেসিও রাত ২টার পর বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

২২ আগস্ট জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাধারণ ওষুধের দোকান রাত ১২টা আর হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান রাত ২টার পর বন্ধ রাখতে হবে। ডিএসসিসির এ ধরনের গণবিজ্ঞপ্তি অযৌক্তিক বলে সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিটিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সর্বপ্রথম সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসের এসি বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, কর্মকর্তারা এসি বন্ধ রাখেন না। অথচ তারাই জনদুর্ভোগ তৈরি করছেন। 

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা চিন্তা ছাড়াই ওষুধের দোকান বন্ধে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাঁরা সুস্থ মস্তিষ্কে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাঁদের মস্তিষ্ক সারাদিন লুটপাটে ব্যস্ত থাকে। ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা অফিসে এক ঘণ্টা এসি চালাবেন আর ওষুধের দোকান সারাদিন খোলা রাখলেও সমপরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হবে না। কারণ একটা ওষুধের দোকানে একটা ফ্যান এবং একটা লাইট জ্বলে।  আসলেই তারা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চাইলে, তাদের কমন সেন্স খাটাতে হবে। ওষুধের দোকান রাত ২টার পর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। সহজ জিনিসটাকে জটিল করে ফেলছে।

অন্যদিকে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে, এটা ভালো দিক। কিন্তু ওষুধের দোকান বন্ধে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেটা মোটেও ঠিক করেনি। গণবিজ্ঞপ্তি যতদ্রুত প্রত্যাহার করা হবে, ততই সরকারের মঙ্গল। কারণ বিশ্বের কোন দেশ যুদ্ধ সময়ও ওষুধের দোকান বন্ধ রাখে না। ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখে। সেখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ওষুধের দোকান বন্ধের কোনো মানেই হয় না। 

মিস্টার চৌধুরী আরও বলেন, ওষুধের দোকান ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ফার্মেসি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যাঁরা দিয়েছেন তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন। এসির নিচে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন। আর মানুষের ভোগান্তি হবে এমন উল্টো-পাল্টা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

আইনি নোটিশ

গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী সরকারের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান নামের ওই আইনজীবী সোমবার ওই আইনি নোটিশ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠিয়েছেন। 

নোটিশে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন বা সংশোধন করতে বলা হয়েছে।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আজকে একটা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, ‘সাধারন ওষুধের দোকান রাত ১২টা এবং হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ‌ওষুধের দোকান রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে’। এরপর সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে।

নোটিশে বলা হয়, ওষুধ হলো জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় একটি পণ্য। তা প্রয়োজনসাপেক্ষে জীবন রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করতে হয়। ওষুধ বিক্রির সময়ের ওপর নিষেধাজ্ঞায় মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানুষকে জীবন রক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কিন্তু এই গণবিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশের সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

তাই নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তিটির ওই অংশ পরিবর্তন বা সংশোধন করার জন্য অনুরোধ রইল। অন্যথায় ‌ওই গণবিজ্ঞপ্তির কারণে কারও জীবন বিপণ্ন হলে তার দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!