নভেম্বর ১৮, ২০২১, ১২:০৯ এএম
খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে নিয়ে বাসায় থাকতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি নয়? আপনাকে যদি কেউ হত্যার চেষ্টা করত, আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন?’-প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি বিএনপি নেতারা।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকে ফোন দেয়া হলে তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, এই বিষয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া আমরা পরে জানাবো। আমরা কি করতে চাচ্ছি না চাচ্ছি সেই বিষয়ে আপনাদের পরে জানানো হবে।
বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ‘বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা’ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনার পরিবারকে যদি কেউ হত্যা করত, আর সেই হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তার জন্য আপনি কী করতেন?‘
তিনি আরো বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া বলল, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। কোটালিপাড়ায় বোমা যখন পুঁতে রাখে, এর আগে তার বক্তব্য কী ছিল- শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। ভেবেছিল মরেই তো যাব। রাখে আল্লাহ, মারে কে; মারে আল্লাহ, রাখে কে? আমার বেলায় হচ্ছে, রাখে আল্লাহ, মারে কে। তারপরও আবার খালেদা জিয়ার জন্য এত দয়া দেখাতে বলেন? কেউ এই প্রশ্ন করলে আমার মনে হয় অন্তত একটু লজ্জা হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার, চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা আমার হাতে যতটুকু আছে। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’
খালেদা জিয়ার বিষয়টি বিচার বিভাগের বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আইনের বাইরে গিয়ে সরকারের কিছুই করার নেই। তবে আমার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’
খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রশ্নের পর আরও একজন সাংবাদিক উঠে দাঁড়ান, তবে তাকে প্রশ্নের সুযোগ দেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আর প্রশ্ন নেব না। মানুষ এত নিষ্ঠুর আর অমানবিক হলে কাদের জন্য খাটি?’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবারও আবেদন করেছে তার পরিবার। গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে এ আবেদন পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে লিখিত আবেদন দিয়ে এসেছেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার।
এর আগে এ বছরের মে মাসে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল তার পরিবার। তখন সরকার তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ফেরার মাত্র ৬ দিনের মাথায় গত শনিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে তাকে পুনরায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এর আগে, গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। টানা ২৬ দিন চিকিৎসা শেষে ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন তিনি।
সেসময় ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড।
চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। তখন ৫৪ দিন হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর প্রথমে পুরান ঢাকার বিশেষ কারাগার ও পরে কারাবন্দি অবস্থায় বিএসএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য তারা সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর আরও তিন দফায় তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।