চলমান পরিবহন ধর্মঘটের ফলে দুই দিনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। যার ফলে রপ্তানির অর্ডার বিলম্ব হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবহন অবরোধ দ্রুত প্রত্যাহার চায় ব্যবসায়ীরা।
আর্থিক ক্ষতির চেয়ে সুনাম সংকট বেশি
ঢাকা চেম্বার অব ইন্ড্রাস্টিজ এর ২০১৬ সালের এক গবেষণা মতে অবরোধ-হরতালে ট্রাক বা পরিবহন ব্যবস্থা না চললে প্রতিদিন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ সময় প্রতিদিন শিল্পকারখানায় সক্ষমতার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সে হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তবে আর্থিক ক্ষতির চেয়ে সুনাম সংকটে পড়তে চাননা ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গণপরিবহনের অবরোধ কারও কাম্য নয়। এতে সার্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হয়। কিন্তু আর্থিক ক্ষতির চেয়ে সুনাম বেশি নষ্ট হয়। কেননা অর্ডার নিয়ে যদি যথাসময়ে তা ডেলিভারি দিতে না পারি তাহলে সুনাম সংকটে পড়তে হয়।
কোন খাতে কত ক্ষতি
দেশে মোট ক্ষতির পরিমানের বেশিরভাগই পোশাক খাতকে কেন্দ্র করে। পোশাক খাতের এক দিনের অবরোধ-হরতালে ৬৯৫ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। ক্ষতি হয় ১৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলমান অচলাবস্থায় পোশাকশিল্প ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছে, যা টাকার অঙ্কে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, ভারতসহ প্রতিযোগী দেশগুলো এর সুযোগ নিতে পারে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা।
দেশের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষি খাত। এই খাতে মোট ব্যয় ২৮৮ কোটি টাকা। পোল্ট্রিশিল্পে ১৮ কোটি ২৮ লাখ, হিমায়িত খাদ্য খাতে ৮ কোটি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৩০০ কোটি, পর্যটনশিল্পে ২০০ কোটি, আবাসন খাতে ২৫০ কোটি, শপিং কমপ্লেক্সসহ দোকানপাট খাতে ১৫০ কোটি, প্লাস্টিক পণ্য খাতে ১৭ কোটি ৮৫ লাখ, বিমা খাতে ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
ক্ষতির পরিমান আরও বেশি
গবেষণা পত্রের তুলনায় ক্ষতির পরিমান আরও বেশি বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, প্রতিবছরই খরচের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে এমন অবরোধ শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয় বরং সুনাম নষ্ট করে।
গবেষণার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে শফিউল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ক্ষতির পরিমানও আরও বৃ্দ্ধি পাবে। কিন্তু করোনা মহামারীর পর এমন পরিস্থিতিতে অবরোধ না হওয়াই কাম্য।