মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব-শারদীয় দুর্গোৎসব। পঞ্জিকা মতে সোমবার(১১ অক্টোবর) থেকে পূজা শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের এই উৎসব।
সোমবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টায় কল্পারম্ভ এবং বিকাল ৪টায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হচ্ছে।আগামীকাল মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সপ্তমী, পরশু বুধবার (১৩ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা, বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) মহানবমী বিহিত পূজা এবং শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমী ও দর্পণ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রাচীন এই শারদোৎসব। এর আগে গতকাল রবিবার সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি অঞ্জলী মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যায় ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়েছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের সনাতন ধর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গা শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে ঘোড়ায় চড়ে মর্ত্যলোকে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসছেন। আর ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। ঘোড়া এমন একটি বাহন যা যুদ্ধের যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়। তাই দেবী দুর্গার ঘোড়ায় চড়ে আসার অর্থ হলো এই সময়ে যুদ্ধ, অশান্তি, হানাহানির সম্ভাবনা থাকে-এমনটি ধারণা হিন্দু সম্প্রদায়ের।
সারাদেশে এবার পূজোমণ্ডপের সংখ্যা ৩২ হাজার ১১৮টি। শুধুমাত্র রাজধানীতেই ২৩৮ টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩৪।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে গতকাল রবিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো ঝুঁকি দেখছি না। তবে আশঙ্কার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছি না। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জঙ্গিরা অনলাইনে সক্রিয়। তবে কেউ তাদের পোস্ট দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই।’
মন্দিরগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের বড় মন্দিরগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম করা হবে। ছোট মন্দিরগুলোয় পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করবে।’
এদিকে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র্যাব) অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও কোনরকম আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরতি থাকা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন এবং ভক্তিমূলক সংগীত ব্যতীত অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।