দেশে এখন পর্যন্ত আট হাজার ৮৯০ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। রবিবার (২৫ জুলাই) বিএমএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বিএমএ জানায়, করোনা আক্রান্ত আট হাজার ৮৯০ জনের মধ্যে চিকিৎসক তিন হাজার ৫৮ জন, নার্স দুই হাজার ১৭৫ জন আর অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তিন হাজার ৬৭৫ জন।
বিএমএ আরও জানিয়েছে, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত করোনা এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৬৯ জন চিকিৎসক মারা গেছেন।
করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম চিকিৎসক মারা যান গত বছরের ১৫ এপ্রিল। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসক।
দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এর চাপ পড়ে। এসব উপেক্ষা করেই চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাজীবন বাজি রেখেই চিকিত্সাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সাধারণ মানুষ যখন করোনার ভয়ে ভীত হয়ে ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন, তখন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিবার-পরিজন ফেলে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসাবে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্ম ীদের।
এই ক্ষতি নিঃসন্দেহে অপূরণীয়। কারণ করোনার মতো জটিল ও কঠিন মহামারির সঙ্গে লড়তে ডাক্তা, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের কোনও বিকল্প নেই। দেশে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ার আরও অধিক সংখ্যক স্বাস্থ্যসেবা কর্মী দরকার আমাদের।
এছাড়া কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, আইসিইউতে কর্মরত ইনচার্জ, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, হাসপাতলে ভর্তি হয়ে চিকিত্সা নিয়েছেন এবং কোভিড-পরবর্তী জটিলতায় এখনো ভুগছেন। অনেকে চলেই গেছেন চিরতরে!
চিকিৎসকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ অতিরিক্ত রোগীর চাপ। হাসপাতালগুলোতে যত বেশি রোগীর চাপ বাড়ছে, তত বেশি চিকিত্সক আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের ধরনগুলো বর্তমানে এত বেশি সক্রিয় যে তা খুব দ্রুত ফুসফুসকে সংক্রমিত করছে, এতে রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং সবারই মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
পাশাপাশি চিকিত্সকরা একটা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে করোনার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলমান এই চাপে রোগী সামাল দেওয়াও তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত রোগী হলে বা রোগীর চাপ বেশি হলে এসব সীমিতসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর এত বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এছাড়া করোনা রোগীদের সংস্পর্শে থাকার জন্য, সতর্কতা হিসাবে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ ব্যক্তিকেই পরিবার-পরিজনদের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ সম্পূর্ণ নতুন একটি রোগ। এই সংক্রমণ ইতিমধ্যে বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র কিংবা উন্নত রাষ্ট্রগুলোও আজ ধরাশায়ী হয়েছে এই সংক্রমণের কাছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন স্ট্রেইন দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কিংবা বেঁচে থাকতে হলে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
তাই পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের জীবনের সুরক্ষার জন্য এবং আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে আরও অধিক সতর্ক হওয়ার কোনও বিকল্প নেই। একই সঙ্গে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো ব্যবস্থাই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।