বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’-কথা

হাসনাত আসিফ কুশল

আগস্ট ৩০, ২০২৪, ০৪:২৩ পিএম

বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’-কথা

বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্সধর্মী উপন্যাসের নাম ‘কপালকুণ্ডলা’। এর ঔপন্যাসিক হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এটা আমরা সবাই জানি।

বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের কাহিনী প্রধান চরিত্র কপালকুণ্ডলাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে, নবকুমার যখন এক সন্ন্যাসীর আঙিনায় ভুলক্রমে প্রবেশ করে ফেলে, তখন কপালকুণ্ডলা এসে নবকুমারকে জানায়, ওই সন্ন্যাসীর নরবলির অভিপ্রায় রয়েছে। এরপর উপন্যাসের আরেকটা অংশে দেখা যায়, নবকুমার ও কপালকুণ্ডলার বিয়ে হয়। এটা অবশ্য নবকুমারের দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে একজনের সঙ্গে বিয়ে হলেও তার সঙ্গে সংসার করা হয়ে ওঠেনি। প্রথম সংসারের স্ত্রীর সপরিবারে মুসলিম হয়ে গেলে হিন্দু রীতি অনুযায়ী তাদেরকে ত্যাগ করতে হয়েছে। আর তা ছাড়া প্রথম সংসারের স্ত্রী নবকুমারদের বাড়িতে থাকতোও না।

উপন্যাসে নবকুমারকে যখন অধিকারী কপালকুণ্ডলার সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন সে বলেছে, “আমার প্রাণরক্ষায়িত্রীর জন্য কোন কার্য্য আমার অসাধ্য নহে। ইনি আমার আত্মপরিবারস্থা হইয়া থাকিবেন।”

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার নৈহাটি শহরের অন্তর্গত কাঁঠালপাড়া গ্রামে ১৮৩৮ সালে ২৬ জুন জন্ম নেওয়া বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক হিসেবেই পরিচিত। তার লেখা ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া প্রথম রোমান্সধর্মী উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’, প্রথম সামাজিক উপন্যাস ‘বিষবৃক্ষ’, প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘রাজসিংহ’ এবং প্রথম রাজনৈতিক উপন্যাস ‘আনন্দমঠ’।

পেশাগত জীবনে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। ১৮৯১ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এ ছাড়া ১৮৭২ সাল থেকে বঙ্গদর্শন নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করেন তিনি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসের সংখ্যা ১৫টি। এর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় লেখা উপন্যাস ‘Rajmohan’s wife’। এ ছাড়া তার আরও ১৪টি বাংলা উপন্যাসের মধ্যে ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘বিষবৃক্ষ’, ‘মৃণালিণী’, ‘রাজসিংহ’, ‘আনন্দমঠ’ অন্যতম। তার বেশির ভাগ উপন্যাসের উপজীব্য হলো প্রথা ও সংস্কার আন্দোলন, সনাতন ধর্মের পুনরুত্থান ও রক্ষণশীলতা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সংঘাত এবং প্রগতিশীল ভাবধারার অভাব, সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রাধান্য এবং সর্বোপরি উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আর্থ-সামাজিক পটভূমিকা। ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসেও এই ছাপ দেখা যায়। ১৮৬৬ সালে গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। উৎসর্গ করা হয়েছিল স্বীয় মেজো ভাই স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসে সুবিখ্যাত কয়েকটি উক্তি হলো- ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন?’, ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ’, ‘প্রণয় কর্কশকে মধুর করে, অসৎকে সৎ করে, অপুণ্যকে পুণ্যবান করে, অন্ধকারকে আলোকময় করে’ প্রভৃতি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘কপালকুণ্ডলা’ অন্যতম প্রধান উপন্যাস। ‘দুর্গেশনন্দিনী’র পরেই রয়েছে এই উপন্যাসের অবস্থান। গঠনশৈলীর বিচারেও বঙ্কিমচন্দ্রের এই উপন্যাসকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর একটি বললেও অত্যূক্তি হবে না।

Link copied!