সত্য বললে কিছু মানুষ রাগ করে,
একঘরে করে সমাজ
গৃহবন্দি করে রাষ্ট্র,
রাষ্ট্র শাস্তি ও দেয়,
জন্মদিনের একদিন আগে এমনি কবিতার লাইন নিয়ে ফেসবুক লাইভে হাজির হন তসলিমা নাসরিন। তবে কি দেশের প্রতি এক প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি?
নির্বাসিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে আলোচিত হয়েছেন এই লেখিকা। কখনো নিজের লেখার সূত্রপাত ধরে, কখনো বা নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনাকাঙ্খিত ছবি প্রকাশের মাধ্যমে।
সম্প্রতি এক সার্জারিতে পা হারিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন, অভিযোগ করেছিলেন ভুল চিকিৎসায় তাঁর পা কেটে নেয়া হয়েছে। পঙ্গু জীবনের অভিশাপ তিনি কখনোই পেতে চাননি। বলা বাহুল্য, তাঁর জীবনের অনেক কিছুই অভিশাপ থেকে কম কিছু নয়।
প্রেমিক রুদ্রর সাথে বিয়ে ,অতঃপর বিচ্ছেদ সবটা মানিয়ে, ফের লেখায় মনোনিবেশ করেছিলেন। চেয়েছিলেন সমাজ বদলাতে, সমাজের অন্ধকার কাটাতে। বিচ্ছেদের শোক না কাটতেই তাঁর লেখা নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক। ১৯৯৩ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ‘লজ্জা’, ‘সেইসব অন্ধকার’ সহ আরও কিছু বই নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড় ।
১৯৯৪ সালের ১৫ আগস্ট দ্য স্টেটম্যানের এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়, সরকারি দণ্ডবিধির ২৯৫A ধারাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় মামলা হয়েছিল তাঁর নামে।
কোরআন সংশোধন এবং নবী রাসূল নিয়ে বাজে উক্তি করায় তাঁর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘট থামলেও মামলা চলেছিল বেশ কিছুদিন। নিজের নিরাপত্তায় আত্মগোপন করেছিলেন ভারতে।
মামলা নিষ্পত্তি হলেও দেশে আর কখনই ফেরা হয়নি তাঁর। আবাস হয় পশ্চিম বঙ্গে কিন্তু সেখানেও বিতর্কিত হন তিনি, এরপর স্থায়ী বসবাস শুরু করেন দিল্লিতে।
কিছু লিখলেই আলোচনায় উঠবে এরকম লেখক তসলিমা ব্যতীত আর কেউ আছে কি না সন্দেহ। তাঁর লেখার যেমন সমালোচনা আছে তেমনি তুলে ধরেছেন সমাজের নানা বৈষম্য।
তাঁর ‘নির্বাসিত’ লেখাটি নিয়ে ২০১৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন চুনি গাঙ্গুলি, যেখানে তসলিমা নাসরিনের ব্যক্তিগত জীবনের অনেকটাই উঠে এসেছিল।
মহিলা প্রযোজক হিসেবে চুনি গাঙ্গুলিই প্রথম তাঁর লেখার নিষিদ্ধতা নিয়ে এক প্রকার আওয়াজ তোলেন। তবে এই প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি প্রযোজকের, নির্বাসিত চলচ্চিত্রের ঝুলিতে এসেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা পদক।