বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে রঙিন হয়ে উঠেছিল শিল্পকলা একাডেমি

নাফিজ ইসলাম

মার্চ ১৮, ২০২৩, ০৮:৩৪ এএম

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে রঙিন হয়ে উঠেছিল শিল্পকলা একাডেমি

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ঘিরে আনন্দমুখর এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল শুক্রবার ১৭ মার্চ। এদিন দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এসব সাংস্কৃতিক আয়োজনে রঙিন হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশের সংস্কৃতিচর্চার একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান। জাতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশকে অব্যাহত রাখতে এবং বাংলাদেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলার চর্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর থেকেই জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষন ও প্রসারের মাধ্যমে সকল মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির প্রবাহ তৈরি করে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

Shilpokola Ekademi inner

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করে ছবি আঁকছে শিশুরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

এদিন দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর মধ্যে ছিল সকাল ৮.০০ টায় ধানমন্ডি ৩২ এ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী কর্মসূচী। মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর নেতৃত্বে একাডেমির কর্মকর্তা-শিল্পী ও কর্মচারীবৃন্দ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকাল ১০.০০ টায় উদ্বোধন করা হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আর্ট ক্যাম্প। ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সকাল ১০.০০টা থেকে শুরু হয়ে চলে দুপুর ১২.০০ টা পর্যন্ত। ২ শতাধিক শিশুর অংশগ্রহণে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের প্লাজায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে ৫-১৮ বছর বয়সী শিশুরা অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক শিশুকে একাডেমি থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পরে তাদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয় চিত্রশালা গ্যালারিতে। শিশুদের এ আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ২০৪১ এ দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। শিল্পে সাহিত্যে শিশুদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারলে তারাই একদিন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

পরে অংশগ্রহণকারী শিশুদের হাতে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। জাতীয় শিশু দিবসের এ আয়োজন নিয়ে  চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম বলেন, শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোর পাশাপাশি আমরা চাই, উন্নত বাংলাদেশের যে ভিশন সরকারের রয়েছে তা শিশুদের মধ্যে প্রস্ফুটিত করতে। ছোট শিশুদের মনে সঠিকটা তুলে ধরলে তারা সুন্দর চিন্তা ধারা নিয়ে বেড়ে ওঠবে। ছবি আঁকানোর মাধ্যমে সেই বার্তাটাই সবার মধ্যে দিতে চাই।

বিকাল ৩.০০ টায় ‘বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ১০৩ তম জন্মবার্ষিকীতে ১০৩ টি ছবি নিয়ে চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক। জাতীয় চিত্রশালার ২ নম্বর গ্যালারিতে ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৩ প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলবে শিল্পী শাকিলা খান চয়ন এর এ চিত্রকর্ম প্রদশনী।

বিকাল ৪.০০টায় টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে অভিভাবকসহ ২শতাধিক শিশুর অংশগ্রহণে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। শিশুদের সেমিনারে আলোচক শিশু বক্তারা নানা ধরনের বুলিং নিয়ে নিজেদের ভাবনা ও প্রতিবাদের কথা তুলে ধরেন। শিশুরা জানায়, সমাজে এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কিংবা স্কুলের বন্ধুদের কাছেও নানা ধরনের বাজে মন্তব্য ও বর্ণ বৈষম্যের শিকার হোন তারা।

Shilpokola Ekademi inner 2

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করে ছবি আঁকায় মশগুল এক শিশু। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ শীর্ষক এ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন শিশু সভাপতি তাহফিম যুনাইরা আনশী। অনুষ্ঠানে একাডেমির মহাপরিচালক শিশুদের উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, আজকের শিশুরাই আগামির ভবিষ্যত। যে কোন ধরনের সংকট মোকাবেলা করে শিশুদের এগিয়ে যা্ওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

বিকাল ৫.৩০ টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের সামনে থেকে শিশুদের অংশগ্রহণে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। একাডেমির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও প্ল্যাকার্ড হাতে ব্যানার নিয়ে শতাধিক শিশু বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। পরে আনন্দ শোভাযাত্রাটি একাডেমি প্রদক্ষিণ করে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।

সন্ধ্যা ৬.৩০ মি. জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. আবুল মনসুর। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক।

পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জীবনি নির্ভর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

Link copied!