বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও একজন নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দফায় দফায় হামলা ও একটি সেন্টারের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে নির্বাচনে। নগরীর লালখানে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পাহাড়তলীর একটি সেন্টারে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপন ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন অন্য ভাই। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচনে প্রশাসন আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা.শাহাদাত হোসেন।
সকাল ১০টার দিকে নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বাকোলিয়ায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজ সেন্টারে ভোট দেন মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ডাক্তার মো. শাহাদাত হাসেন। এসময় তিনি বলেন, নির্বাচনে সরকারি দলের বহিরাগত ক্যাডাররা বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে।
ভোট দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসনের কাজ ভোটারদের সহায়তা করা। তা না করে বিএনপির ভোটার হিসেবে পরিচিতদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা সৃষ্টি করছে পুলিশ। ভোটকেন্দ্র পুলিশ আওয়ামী লীগের ক্যাডার হিসেবে কাজ করছে। ভোট কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দিয়েছে। প্রশাসনের সহায়তা চাইলে তারা এগিয়ে আসেনি। আওয়ামী লীগের বহিরাগত ক্যাডারদের হামলায় তাদের দলের বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে।
এদিন সকালবেলা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, মাঝপথে নির্বাচন ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে আমি নই। প্রায় ৩৫ বছর ধরে রাজনীতিতে আছি। দেশর ও জনগণের জন্য কাজ করে চলেছি। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় কাজ করেছি। মাঝপথে নির্বাচন ছাড়ার অভ্যাস আমার নেই।
ভোটের শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই উল্লেখ করে বিএনপি প্রার্থী বলেন, ‘প্রশাসন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য যেভাবে আচরণ করছে তাতে মনে হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনটা আমাদের হচ্ছে না। নির্বাচনটা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র বনাম আমাদের সাথে।’
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ নাকচ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি জনরায় কে ভয় পায়। তাই তারা নানা অজুহাতে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করেত চায়। নির্বাচনকালীন সময়েও তারা আমাদের অফিস ভাঙচুর করেছে। এমনকি আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে পরিস্থতি উত্তপ্ত করতে চেয়েছিলো তারা। তবে আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের পাতানো পা দেয়নি। উল্টো এখন নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় ইউসেফ স্কুল কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের গোলাগুলি হয়। এসময় মারা যায় মো. আলাউদ্দিন আলম নামে এক যুবক।
নিহত আলাউদ্দিনকে নিজের সমর্থক দাবি করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলয়র প্রার্থী মো.মাহমুদুর রহমান বলেন, “আলাউদ্দিন আমার কর্মী। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বহিরাগত লোকজন নিয়ে গতকাল থেকে এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে গুলি করে আলাউদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে।” সে সময় এক নারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। তাদের কারও গায়ে গুলি লেগেছে, কারও মাথা ফেটেছে।
ঠিক একই সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী এফ কবির আহমেদ মানিকের সমর্থকদের মধ্যে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষই ইট-পাটকেল ছুড়ে একে অন্যকে ঘায়েলের চেষ্টা চালায়। এ সময় অন্তত তিন জন আহত হন।
আমাদের চট্টগ্রম প্রতিনিধি জানান, ভোট দেওয়ার জন্য সকাল ৮টার আগেই অনেকেই কেন্দ্রে উপস্থিত হন। তবে প্রথম দিকে দলীয় ভোটার নেতাকর্মীদের বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। করোনাকালে এই নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। বন্দর নগরীতে এবার সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক মেশিনে ভোট হল।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। আর ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১শ' ৭২ জন এবং সংরক্ষিত ৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭শ ৬ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৭শ ৩৫টি।
https://www.facebook.com/thereportdotlive/videos/2472143769758675