সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর উত্তরা, ধানমন্ডি, বাড্ডা ও সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। এ ঘটনায় আজ অন্তত ৯ জনসহ মঙ্গলবার থেকে মোট ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
আজ দিনের বেলায় ঢাকায় ৭, মধ্যরাতে হানিফ ফ্লাইওভারে ১, মাদারীপুরে ১ জনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
উত্তরাস্থিত নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। এ ছাড়া আহত দুজনকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উত্তরা শাখার জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করেছেন জরুরি বিভাগের নার্স সুপারভাইজার (সেবিকা পরিদর্শক) শাহিদা বেগম। তিনি বলেন, “হাসপাতালে এখনও বহুজন চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে উত্তরার ঘটনার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।”
অন্যদিকে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহত আরেকজনের নাম দুলাল মাতবর। পেশায় তিনি হাইএস চালক। সংঘর্ষের সময় ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন দুলাল।
ফরাজি হাসপাতালের উপ-মহাব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন ব্রিফিংয়ে বলেন, “হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক দুলালকে মৃত ঘোষণা করেন।”
অন্যদিকে সাভারে এক শিক্ষার্থী পুলিশের এপিসি ভ্যানের ওপরে ওঠার পুলিশ তাকে গুলি করে। তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী।
এদিকে ধানমন্ডিতে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী ফারহান (১৭) নিহত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। সিটি হাসপাতালে তাকে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি।
এর আগে মধ্যরাতে হানিফ ফ্লাইওভারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে দুটি হেলিকপ্টার নিয়ে উপস্থিত হয়েছে র্যাব। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এদিন সকাল থেকেই মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। একপর্যায়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে যান দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেই পুলিশ ছররা গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আহত হয়েছেন অনেকে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন কোটা আন্দোলনকারীরা। এরপর সকাল পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কাঁদানে গ্যাস (টিয়ার শেল) নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে পুলিশ। মুহূর্তেই মেরুল বাড্ডা এলাকায় যানজটে হাপিত্যেশ করতে থাকেন কর্মব্যস্ত নগরবাসী। সকাল ১১টার দিকে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এলাকায় দায়িত্বশীল পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করে। এ সময় বাইরে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এ সময় বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়।
দুপুর একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে আন্দোলনকারীদের দিকে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকেই আহত হন। এদিকে বাড্ডা লিংক রোডের দিকেও একদল আন্দোলনকারী অবস্থান নিয়েছেন। সেখানেও শক্ত অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েকজন সাধারণ নাগরিকও সেখানে অবস্থান করেছেন।
এর আগে গতকাল বুধবার ছুটির দিনেও ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রবিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা ও প্রতীকী কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।