জুলাই ১৪, ২০২৪, ০৩:০৪ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বঙ্গভবনের দিকে রওনা হলে গুলিস্তানে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে আবারও বঙ্গভবনের দিকে মিছিল সহকারে যেতে শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
পুলিশের বাধার মুখে আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গানে গানে, শ্লোগানে শ্লোগানে সরকারি চাকরিতে কোটার প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। গুলিস্তানে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে এক শিক্ষার্থী বলেন, “ব্যারিকেড দেওয়া আমাদের জন্য নেতিবাচক বার্তা বর্তায়। এটা, এই যে, ছাত্ররা যৌক্তিক দাবিতে আসছে (এসেছে), ব্যারিকেড দিয়ে তাদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে দেওয়া, এই কারণেই ছাত্রদের মধ্যে একটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে।”
অন্য একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গভবনে ১০ জন রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে ওই আন্দোলনকারী জানান, “এখন এখানেই অবস্থানে থাকবো। যখন রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আসবো, তখন আবার আমরা বসবো।”
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের দাবি আদায়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রপতি, বঙ্গভবন হচ্ছে একটি কেপিআই এলাকা। এখানে ২০ হাজার ছাত্র নিয়ে যাওয়া কোনওভাবেই সম্ভব না। কারণ আমরা তাকে, মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ফোর্স করার কিছু নেই। আমরা তাকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করবো। উনি সেটা গ্রহণ করবেন। আমরা চলে আসবো।”
পুলিশের বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী জানান, “এখানে বাধা, নিরাপত্তা ইস্যুতে হয়তো বাধা দিচ্ছে। সেটা তাদের, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।”
আরেকজন নারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী জানান, “আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি পালন করছি। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে পেছনে অনেক জ্যাম (যানজট)। জ্যাম পার হয়ে আমরা এখানে প্রায় এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী এখানে জমা হয়েছি এবং আমরা এখানে ব্যারিকেডটা ভেঙে যাওয়ার এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই এখানে অবস্থান করছি।”
সাংবাদিকরা ওই নারী শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করেন, “আমরা দেখলাম, আপনারা জিরোপয়েন্টের ব্যারিকেডটা ভেঙে এসেছেন। এখন আপনারা ওইদিকে যাবেন?”
জবাবে ওই নারী শিক্ষার্থী নেতিবাচকভাবে মাথা নাড়িয়ে জানান, “এখন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এখানে অবস্থান করছি। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, পুলিশও এখানে অবস্থান করছে। আমরা তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবেই আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চাই। কোনও সংঘাতে যাওয়ার আমাদের ইচ্ছা নেই।”
পুলিশের বাধার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এখন পুলিশের জায়গা থেকে তারা হয়তো আমাদের বাধা দিচ্ছে। এখন ছাত্রদের জায়গা থেকে যেহেতু আমরা কর্মসূচি দিয়েছি বঙ্গভবন অভিমুখে, সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। পুলিশ পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে।”
ওই নারী শিক্ষার্থী জানান, তাদের পক্ষ থেকে বঙ্গভবনে কোনও প্রতিনিধি যাবে- এমন পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই।
গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত ৭ কলেজ শিক্ষার্থীরাও এই মিছিলে শামিল হন। ক্যাম্পাসের ভিসি চত্বর, ছাত্র-শিক্ষক সম্মেলন কেন্দ্র (টিএসসি) ও শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এসে মিছিলটি পৌঁছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ চলছে। গত ৭ জুলাই থেকে শুরু হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, প্রধান মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।