খাবারের ছবি ভাইরাল: গণভবনে তোপের মুখে ‘ডিবি হারুন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ৩০, ২০২৪, ০৫:২০ পিএম

খাবারের ছবি ভাইরাল: গণভবনে তোপের মুখে ‘ডিবি হারুন’

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান। ডিবি হারুন নামেই দেশব্যাপী সমধিক পরিচিত। আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা তার বিভিন্ন কাজের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই আলোচনায় আসেন।

বিভিন্ন সময় ডিবি প্রধান হারুনের অফিসে দেশের বড় বড় রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, সিনেতারকাদের খাবার খাওয়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই তাই মজা করে ডিবি হারুনের অফিসকে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের সঙ্গে খাবার গ্রহণের ছবি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে গণভবনের বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছেন হারুন। সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে ডিবি হারুনের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেন ১৪ দলীয় জোটের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে রাশেদ খান মেনন ছাড়াও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ একাধিক নেতা কথা বলেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

ডিবির হারুন অর রশীদ প্রসঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকে হওয়া আলোচনার ব্যাপারে হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে আমি ও রাশেদ খান মেননসহ অনেকেই কথা বলেছেন। মূলত কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়। এটা সমাধানের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিবিদরা সংলাপের মাধ্যমে এর সমাধান করবেন, সেটাই বাঞ্ছনীয়। এর বাইরে আমলা দিয়ে রাজনৈতিক বিষয় সমাধানের চেষ্টা করা সঠিক নয়। বৈঠকে আমরা সরকারকে বলেছি, আমলা দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টাটা বাদ দিতে। এটা খুবই লজ্জাজনক।

১৪ দলের বৈঠকে হারুন অর রশীদকে ডিবির পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, হারুন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি তার পদে থাকবেন কি না সে ব্যাপারে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।

১৪ দলের সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেনসহ আরও অনেকে।

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে খাওয়ানোর পর সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বিষয়টিকে ‘জাতির সঙ্গে মশকরা’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

২৯ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

২৮ জুলাই রাতে ডিবি কার্যালয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ৬ সমন্বয়ককে খাবার খাইয়ে সেই ছবি ডিবি কর্মকর্তা হারুন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই ওদের ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদের সঙ্গে কথা বললাম।

পরে সোমবার হাইকোর্ট বলেন, ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।

এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে বিনোদন জগতের সেলিব্রেটিদের সঙ্গে ডিবি অফিসে হারুনের খাওয়ার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই নিরাপত্তার কথা বলে আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে মিন্টো রেডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরে ২৭ জুলাই সারজিস, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকেও ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।

পরে ২৮ জুলাই রাতে ডিবি হেফাজত থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ৬ সমন্বয়ক।

তাদের স্বাক্ষরিত এক লিখিত বার্তায় বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে হতাহত হয়েছেন অনেকেই। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নি সংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ও সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।

তারা আরও বলেন, আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা এরই মধ্যে পূরণ করেছে সরকার। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।

যদিও আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়করা দাবি করেছেন, ডিবি অফিসে চাপের মুখে ৬ সমন্বয়ককারীকে দিয়ে এই বার্তা জোর করে পড়ানো হয়েছে।

এদিকে ডিবি অফিসের দরজা থেকে ফেরত এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষক এবং সাবেক স্বাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। তারা ডিবি হেফাজতে থাকা ছাত্রদের খোঁজখবর নিতে গেছিলেন ডিবি অফিসে। যদিও তাদেরকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মলনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ সমন্বয়কের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

যদিও ডিবিপ্রধান হারুন জানান, আটক নয়, নিরাপত্তার স্বার্থেই ৬ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে।

Link copied!