ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পর বুধবার রাতভর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুলডোজার দিয়ে ভবনটির একাংশ ভেঙে দেয়া হয়।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার পরে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত সব স্থাপনা ভাঙচুর করা শুরু হয়। ঘটে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা।
ধানমন্ডিতে থাকা শেখ হাসিনার আরেকটি বাসভবন সুধাসদনেও হামলা চালানো হয়। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের দুটি তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
আরও যত হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা-
বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল হানিফের বাড়ি
কুষ্টিয়ায় বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি। বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়।
এর আগে গত ৪ আগস্ট ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চলেছিল লুটপাট। এ ঘটনার পর বাড়িটিতে ইট ছাড়া কিছুই ছিল না। তবে ৫ আগস্ট থেকে হানিফ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন।
রংপুরে ভেঙে ফেলা হলো শেখ মুজিবের দুটি ম্যুরাল
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ম্যুরাল দুটি ভেঙে ফেলেন।
রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের বুলডোজার এনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছেন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় কিছু নেতাকর্মী হাতুড়ি, রড ও খুন্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। রাত ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধুর মুরালে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। বুধবার রাত ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে এ ঘোষণা দেন তারা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল ভেঙে ফেলা হয়।
সিলেটে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল
সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভেঙে ফেলার কাজ চলছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা জানিয়েছেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরের কিনব্রিজ এলাকা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি বুলডোজার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। পরে ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করেন তারা। এখনও এটি ভাঙার কাজ চলছে।
চট্টগ্রামে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও নগরের জামাল খান এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের পুরোনো একাডেমিক ভবনের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভেঙেছেন ২০-২৫ জন। তাদের কয়েকজনের হাতে হাতুড়ি ছিল। অন্যদের হাতে পাথর।
ভাঙচুরের পর মশালমিছিলটি নগরের জামাল খান এলাকায় যায়। সেখানে দেয়ালে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা।
খুলনায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘শেখ বাড়ি’
খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত আলোচিত ‘শেখ বাড়িতে’ ভাঙচুর চালিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। পরে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এটি। বাড়িটি বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন ও খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের।
আমুর ডুপ্লেক্স, হাসনাত আবদুল্লাহর বাসভবন গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে
বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর ডুপ্লেক্স ও জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে বারোটায় প্রথমে নগরের কালীবাড়ি সড়কে হাসনাতের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। সেনাবাহিনী এসে প্রথমে বাধা দিলেও পরে ফিরে যায়। সেখানে ভাঙচুর শেষে রাত ২টার দিকে বগুড়া সড়কে আমির হোসেন আমুর ডুপ্লেক্স বাসায় গিয়ে সকাল পর্যন্ত সেখানে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর চলতে থাকে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে। কালীবাড়ি সরকার বাসা থেকে তিনি বরিশাল জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের একাংশের আওয়ামী লীগ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। হাসনাতের বড় ছেলে সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাসনাত ও সাদিক আত্মগোপনে যান। সূত্রমতে তারা, ভারতে আছেন। ৫ আগস্ট বিকেলে এ বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল।
আমু ঝালকাঠি জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করলেও রাতে বরিশাল নগরীর এ বাড়িতে থাকতেন। কয়েক বছর আগে বগুড়া সড়কে এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি নির্মাণ করেন তিনি। ৫ আগস্ট অবশ্য এটি ভাঙচুর করা হয়।
ভোলায় তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে আগুন
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর রোডে অবস্থিত তোফায়েল আহমেদের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাড়িটিতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোলাতে এসে প্রিয় কুটির নামের এই বাড়িতে বসবাস করতেন তোফায়েল আহমেদ। বাড়িটিতে বসেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তিনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এখানে আর কেউ আসেননি। বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
বরিশালে শেখ হাসিনার ভাইয়ের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ছাত্র-জনতা
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর কালীবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনের সামনে বুলডোজার নিয়ে আসে ছাত্র-জনতা। রাত সোয়া ১টার দিকে বুলডোজার চালিয়ে ভাঙা শুরু করে তারা।
প্রথমে ভবনের গেটে সেনাবাহিনী ব্যারিকেড দিয়ে জনতাকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করতে দেখা গেছে। যদিও সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে বুলডোজার নিয়ে ছাত্র-জনতা সেরনিয়াবাত ভবন কম্পাউন্ডে ঢুকে পরে। এ সময়ে সমাবেত জনতাকে আওয়ামীবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ঢাবির হল থেকে মুছে ফেলা হলো শেখ মুজিবের নাম
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের পৈত্রিক বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়ায় অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ থেকে শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের উদ্বোধনের সময় লেখা শেখ হাসিনার নামও মুছে ফেলেছে শিক্ষার্থীরা।
বিএসএমএমইউ থেকে নামিয়ে ফেলা হলো বঙ্গবন্ধু নামের সাইনবোর্ড
রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে বঙ্গবন্ধু নাম সম্বলিত সাইনবোর্ডও খুলে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে বিএসএমএমইউ’র সি ব্লক ভবনে টানানো সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়। এরপর আরও একাধিক স্থান থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম খুলে ফেলেন তারা।