পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না: প্রধান উপদেষ্টা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০১:৫১ পিএম

পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাসপোর্ট তো আমার নাগরিক অধিকার। আমি চোর না ডাকাত সেটা পুলিশ আলাদাভাবে বিচার করবে। আমাকে যে জন্ম সনদ দিয়েছেন সেটা তো কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে করেননি। আমাকে এনআইডি দিয়েছেন সেটাও কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে করেননি, নাগরিক হিসেবে পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা আইন করে দিয়েছি, কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছেনি, অথচ আমরা এখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি। এই যে দূরত্ব এটা যেন না থাকে। এগুলোর কোনো কারণ নেই, বিনা কারণে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। হয়রানি করাটাই যেন আমাদের ধর্ম। সরকার মানেই মানুষকে হয়রানি করা, এটাকে উল্টে দিতে হবে। সরকার ভিন্ন জিনিস। আপনার অধিকার পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাজ।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনা হবে আজ। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা হবে। রাতে হবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নৈশভোজ।

প্রতিবছরই জেলা প্রশাসক সম্মেলনে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ডিসিরা। তবে এবার তারা আইনি ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এ জন্য ৬৪ ডিসি এবং ৮ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স লিয়াজোঁ অফিসারের পদ দ্রুত সৃষ্টি করতে বলেছেন তারা।

এ ছাড়া বিদ্যমান পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) উন্নীত করে একজন স্বতন্ত্র ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের (আইজিপি) অধীনে আলাদা পুলিশ তদন্ত বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এসেছে। স্বতন্ত্র তদন্ত বিভাগ প্রতিষ্ঠা হলে ফৌজদারি মামলাগুলো যথাসময়ে এবং সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা সহজ হবে।

ঢাকা ডিসি কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য বাস কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ, ঢাকায় তীব্র যানজটের সম্মুখীন হতে হয় এবং দাপ্তরিকভাবে কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াত করেন কর্মচারীরা। এতে যথাসময়ে অফিসে উপস্থিতি ও অফিস শেষে বাড়ি পৌঁছতে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। এ সমস্যা সমাধানে ঢাকা জেলার ডিসি অফিসের কর্মচারীদের জন্য চারটি বাস কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এবারের সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা করবেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল শনিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্তের মাত্র ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আগের সরকারের অগ্রাধিকারমূলক অনেক বিষয় বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না। এ কারণেই অনেক বিষয় কম বাস্তবায়ন হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এ সম্মেলনে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কাগজে-কলমে প্রায় প্রতিবছরই ডিসি সম্মেলনে গৃহীত ৯০ শতাংশের বেশি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ চিত্র ৬০ শতাংশেরও নিচে বলে জানিয়েছেন এ বিভাগের এক কর্মকর্তা।

ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারদের ৩৫৪ সুপারিশ

ঢাকা জেলায় প্রধান সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদ সৃষ্টির প্রস্তাব এসেছে। ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রধান সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদ সৃজন করা হলেও ১৪টি রাজস্ব সার্কেলে প্রধান এ পদ সৃজন না করায় সেবা প্রদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য ১৪টি রাজস্ব সার্কেলে একটি করে প্রধান সহকারী পদ সৃজন করা যেতে পারে।

সারাদেশে ৩৬টি জেলায় দুদকের কার্যালয় আছে। এখন প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। কার্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগেরও প্রস্তাব করেছেন তারা। তিনজন জেলা প্রশাসক এই প্রস্তাব করেছেন।

বর্তমানে ডিসি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের বদলি ও পদায়নের কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পদায়নের জন্য মন্ত্রণালয় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করে। এখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বদলি ও পদায়নের কাজটিও বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

এ ছাড়া প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে জেলা পুলিশের এসিআর দেওয়া, কনস্টেবল নিয়োগ কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রাখা, ডিসির অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন, অপরাধ ডেটাবেজ ও এনআইডি ডেটাবেজ সার্ভারে ডিসি এবং ইউএনওদের প্রবেশাধিকার, উপজেলা পরিষদের কর্মচারী নিয়োগ ও বদলির ক্ষমতা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের বদলে উপজেলার সরকারি বাসা বরাদ্দের ক্ষমতা। উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের নিয়োগ ও বদলি ডিসিদের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ফরিদপুরের ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

Link copied!