মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ত্রিমুখী হামলার অভিযোগ এসেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা এই হামলা চালান। পাল্টা হামলা চালিয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।
এসব সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্য, ২ সংবাদকর্মীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এ ছাড়া লেকের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে শেখ হাসিনা মহাসড়কের ডিসি ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে শকুনি লেকপাড়, পুলিশ সুপারের বাসভবন, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনেও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষ চলায় মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
হামলার পর পর পালাতে গিয়ে ঘটনাস্থলে শকুনি লেকে পড়ে তিনজন নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে আজ দুপুর একটা পর্যন্ত দুজনের কোনো খোঁজ মেলেনি। জেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. আহাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা জানান, হামলার সময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে কয়েকজন শকুনি লেকের পানিতে পড়ে যায়। এদের মধ্যে দুজন নিখোঁজ আছে। নিহত ওই ছাত্রের গায়ে স্কুল ড্রেস আছে। তবে তাঁর নাম জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সে ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্র জানায়, সকাল ১০টার দিকে মাদারীপুর সরকারি কলেজ, চরমুগরিয়া কলেজ, ইউনাইটেড সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ইউআই স্কুল মাঠে জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শেখ হাসিনা মহাসড়কের ডিসি ব্রিজ এলাকায় জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বেলা ১১টার দিকে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। অন্যদিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও তাঁদের লক্ষ্য করে হামলা চালান।
এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। ডিসি ব্রিজ থেকে পুরোনো কোর্ট পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এ সময় পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে থাকা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ৪০টি রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এতে পুলিশের অন্তত ১০ জন সদস্য, ২ জন সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।