আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে: ফরহাদ মজহার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১, ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম

আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে: ফরহাদ মজহার

ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‍‍`আমাদের মানচিত্র: আমাদের স্বাধীনতা‍‍` শীর্ষক একটি সেমিনারে ফরহাদ মজহার বলেছেন আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‍‍`সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার‍‍` বলে অভিহিত করেছেন।

‍‍`আমাদের মানচিত্র: আমাদের স্বাধীনতা‍‍` শীর্ষক এই সেমিনারে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও ভাবুক ফরহাদ মজহার, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, সামরিক বিশ্লেষক কর্ণেল (অবঃ) আব্দুল হক, ঢাবির ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী ড. সায়মা ফেরদৌস সহ আরও অনেকে।

ফরহাদ মজহার তার বক্তব্যে গণঅভ্যুত্থানের ব্যর্থতা, উপদেষ্টা সরকারের প্রকৃতি, এবং সাহিত্যের রাজনৈতিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি জো বাইডেনের সাথে প্রধান উপদেষ্টার মিথস্ক্রিয়া ও সেনার সমর্থনকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন। মজহারের মতে, সাহিত্যের মূল কাজ হলো মানুষকে একত্রিত করা এবং সম্পর্ক গড়ে তোলা।

তার মতে আমরা একটা গণঅভ্যুত্থান করেছি, কিন্তু আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে এই সরকারকে শপথ নিয়েছে, সেহেতু এই উপদেষ্টা সরকার শেখ হাসিনার রাষ্ট্রের অন্তর্গত এবং তারা শপথ নিয়েছেন এই সংবিধান রক্ষা করার।

তিনি প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে বলেন, "ড. ইউনুসের বিদেশে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তার উচিৎ জনগণের কাছে যাওয়ার, জো বাইডেনের কাছে নয়। জো বাইডেনের কাছে গেলে কি সমস্যা? জো বাইডেন আমেরিকারে জেনোসাইড জো নামে বিখ্যাত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেসব তরুণরা ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে লড়াই করছে রাস্তায়, তারা বিভিন্ন রকম হামলা এবং হুমকির মুখে পড়ছে, তাদের কাছে জো বাইডেন জেনোসাইড জো নামে পরিচিত।"

তার মতে, প্রধান উপদেষ্টা জো বাইডেনের কাছে যেতেই পারেন অসুবিধা নাই। আমরা দূর্বল দেশ বিধায় সেখানে গিয়ে তিনি ডিপ্লোমেটিক্যালি হ্যান্ডশেক করলেন তাতেও কোনো অসুবিধা নাই। "কিন্তু জো বাইডেন যখন তাকে চুমু খায়, তার প্রিয় ব্যক্তি হিসেবে হাজির হয় তখন সেটা একটা মারাত্মক বার্তা দেয়।"

"যখন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন তখন ওয়াকার উজ জামান, আমাদের সেনানায়ক বললেন, ‍‍`আমরা এই সরকারকে সমর্থন করি।‍‍` আমরা কেউ কি জিজ্ঞাসা করেছি এটা? হয়তো তিনি সরলভাবে বলছেন কিন্তু এর যে বার্তা, এর যে মর্ম তা হলো আপনারা একটা সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার পেয়েছেন। যদি সৈনিকরা বা সেনা প্রতিষ্ঠান এই সরকারকে সমর্থন না করে তাহলে এই সরকার কিন্তু যেকোনো মূহুর্তে ভেঙে পড়বে, কারণ তার কোনো লিগ্যাল বৈধতা নাই," তিনি যোগ করেন।

ফরহাদ মজহার সাহিত্যকে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে দেখেন যা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি সাহিত্য বলতে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা বুঝি অর্থাৎ লিটারেচার কে একটা কলোনিয়াল ধারণা বলে অভিহিত করেন। তার মতে, সাহিত্যের যে মর্ম বা রাজনৈতিক মানে তা হলো সহিত থেকে সাহিত্য। "সাহিত্য অপরের সাথে সম্পর্কিত হবার, সম্বন্ধ রচনা করার চর্চা। অপরের সাথে সম্বন্ধ রচনার আকুতি প্রকাশিত হয় সাহিত্যে।" সাহিত্য আমাদের রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তি রচনা করে বলেও তিনি মনে করেন।

"আজকে যদি মেঘালয়ে বা ত্রিপুরায় বৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের এখানে বন্যা হয়। এই যে প্রাকৃতিক সম্পত্তির একসঙ্গে ব্যাবস্থাপনা করার, মোকাবিলা করার এবং সমাধান করার যে পথ সেটাই কিন্তু সাহিত্য। আমি যদি সম্পর্কিত হতে না পারি ত্রিপুরার জনগণের সাথে, যদি বোঝাতে না পারি যে তোমার ওখানে যে বাঁধ আছে সেটা যদি তুমি ছেড়ে দাও আমাকে প্রস্তুত হতে না দিয়েই অথবা সকলে মিলে যদি একটা ব্যবস্থা নিতে না পারি তাহলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।" তিনি বলেন।

"এই জায়গায় আমরা যেতে পারিনা কেন? আধুনিককালের জাতিবাদ। জাতিবাদ দুইরকম, যেটা আধুনিককালে আমরা বাঙালি জাতিবাদ হিসেবে জানি। এর পূর্বে ছিল মুসলিম জাতিবাদ যার ভিত্তিতে আমরা পাকিস্তান পেয়েছি। এটা যে পুরোপুরি নেতিবাচক তা নয়। কিন্তু যেকোনো পরিচয়বাদ যখন দাবি করে আমিই একমাত্র সহীহ, তুমি আমাকে মানবে। যদি তুমি আমাকে না মানো তাহলে তোমাকে হামলা করা আমার জন্য নায্য। এটা হলো ফ্যাসিবাদের ভিত্তি।" তিনি যোগ করেন।

Link copied!