খুলনায় তিন দফা সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে পুলিশ সদস্য নিহত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম

খুলনায় তিন দফা সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে পুলিশ সদস্য নিহত

ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ এসেছে। এ ছাড়া আরও একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

নিহত পুলিশ সদস্য সুমন কুমার ঘরামী (৩৩) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) লাইনসে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা ছয়টা ১০ মিনিটে গল্লামারী কাঁচাবাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ৩ পুলিশ সদস্যদের নাম মাজহারুল ইসলাম, সোহানুর রহমান সোহাগ ও সৌমেন।

রাত সোয়া নয়টার দিকে গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, “সুমন নামে আমাদের একজন কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের ২০-২৫ জন এখনও গুরুতর আহত। সুমন পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন।”

পুলিশ সূত্র জানায়, সুমন ঘরামিকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের অন্য সদস্যরা তাকে নিকটস্থ খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যায় ৪ পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। অন্য ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”

খুলনা
ছবি: সংগৃহীত

যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় পুলিশ সদস্যকে

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ডাকা ছাত্র-জনতার প্রার্থনা ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করতে শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে মিছিল নিয়ে খুলনার শিববাড়ী থেকে সোনাডাঙ্গা থানা মোড় প্রদক্ষিণ গল্লামারী এসে মিলিত হন শিক্ষার্থীরা। বিকেল চারটার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ফটকের সামনে অবস্থান করতে থাকে শিক্ষার্থীদের একটি দল।

আরেকটি দল জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে চাইলে তাদের মিছিল লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এরপর থেকে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের এই মিছিলে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দেখা গেছে।

জিরো পয়েন্টের দিক থেকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা সরে আসেননি। এ সময় সাঁজোয়া যান নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে এগোতে বাধা দেয় পুলিশ। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ।

এ-সময় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে গল্লামারী সেতুর ওপর অবস্থায় নেন। গল্লামারী মোড় থেকে দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাতে থাকে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

সন্ধ্যা ছয়টা ১০ মিনিটে গল্লামারী কাঁচাবাজারে আন্দোলনকারীরা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে বেধড়ক পেটান। এ সময় বাজারের একটি দোকানে পুলিশের ৪ সদস্য আটকা পড়েন। কিছুক্ষণ পর দোকানের শাটার খুলে তারা বাইরের পরিস্থিতি দেখতে বের হলে আন্দোলনকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ সময় পুলিশের ওই সদস্যরা গুলিবর্ষণ করেন। এতে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওই সদস্যদের বেধড়ক পেটান। একপর্যায়ে পুলিশের এক সদস্য প্রাণ হারান।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল বলেন, “দিনভর আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। আমরা ফাঁকা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যসের শেল ছাড়া কিছু মারিনি। কিন্তু তারা তো মানল না। ২০-২৫ দিন ধরে আমরা ধৈর্য ধরেছি। অথচ তারা আমাদের লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলল।”

Link copied!