ইসি সার্চ কমিটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন তারা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২, ০৮:৪৪ পিএম

ইসি সার্চ কমিটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন তারা

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দিতে গঠিত অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটিকে নিয়ে সরকার বিরোধীদের মধ্যে চলছে সমালোচনার ঝড়। সার্চ কমিটি গঠনের বিরোধিতায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) দায়িত্বশীলরা। রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি ছাড়াও নতুন এই সার্চ কমিটি গঠনের সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরাও।

আরও পড়ুন

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ইসি সার্চ কমিটি গঠন

নয়া গঠিত সার্চ কমিটিকে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ’ বলে মন্তব্য করেছেন। সার্চ কমিটি গঠনের পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

সার্চ কমিটি নিয়ে আদেশ জারির পরপরই গণমাধ্যমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “আমরা মনে করি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সার্চ কমিটি হোক আর যে নির্বাচন কমিশনই হোক, এ সরকার থাকলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না।”

এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ। এই সরকার ভোট চুরির সরকার। নতুন নিরপেক্ষ সরকার আসবে। সেই সরকারের অধীনে সার্চ কমিটি গঠিত হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে।”

আরও পড়ুন

সার্চ কমিটি এলো কোথা থেকে, এটা তো সংবিধানেই নেই : আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

শনিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি বলেছেন, “বর্তমান আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যে দুই জন সদস্যের নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই। তবে বর্তমান সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠনে কাদের নাম প্রস্তাব করবে তা দেখার অপেক্ষায় পুরো জাতি। আমরা চাই, গঠিত সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ ও সর্ব মহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবেন, যারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবেন।”

সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কমিটি গঠন আপাতঃ দৃষ্টিতে ভালো হয়েছে। তবে বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে। তাই তারা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কেমন ব্যক্তিকে সার্চ করে বের করবেন, তার উপর নির্ভর করবে কমিটির পরিচয়।

আরও পড়ুন

সার্চ কমিটি ইসি গঠনে ক্ষমতাসীনদেরই খুঁজে নেবে: রিজভী

সার্চ কমিটি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, “কমিটিতে চারজন সদস্যের নিয়োগ আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করেই দেওয়া। আর দু’জন বাইরের। একজন কথা সাহিত্যিক অন্যজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার। আপাতঃ দৃষ্টিতে সার্চ কমিটি ভালো হয়েছে। এখন বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়; বিষয়টি হচ্ছে এমন।”

তিনি বলেন, “তারা যাদের অনুসন্ধান করে বের করবেন, তাদের নাম যেন প্রকাশ করা হয়। সরকারের বলে দেওয়া নাম দিলে হবে না। একজন ব্যক্তির নাম প্রকাশ হলে, তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, তা মানুষই জানাবে। তাই নাম প্রকাশ করা খুব প্রয়োজনীয়। আমরা বলবো আইনে সততা, নিরপেক্ষতা, নীতির কথা বলা হয়েছে। সার্চ কমিটি যেন সেগুলো মেনে যোগ্য লোকদের নামই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, “প্রজ্ঞাপনটি দেখেছি। খুব ভালো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। চার জনের কথা বলার কিছু নেই। কারণ আইন মোতাবেক ওই চার জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বেঁধে দেওয়া। এখন বাকি দুই জনের একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তিনি খুব বিজ্ঞজন। ভালো মানুষ। তার খুব সুনাম আছে। এছাড়া আরেকজন হলেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা হক। তিনিও ভালো মানুষ। আমার দৃষ্টিতে সার্চ কমিটি ভালো হয়েছে। প্রত্যাশা থাকবে একটি সুন্দর নির্বাচন কমিশন গঠনে তারা সৎ, যোগ্য লোককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা দেবেন।”

আরও পড়ুন

সার্চ কমিটি সরকারের ভোট চুরির প্রজেক্ট আখ্যা বিএনপির

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রীয়াজ সার্চ কমিটি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে পোস্ট করে বলেন, “নতুন সার্চ কমিটির প্রধান হয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি আগের দুই বার সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন। ঐ সব সার্চ কমিটিই নুরুল হুদা ও রকিব উদ্দিন কমিশন গঠন করেছিলো। তাঁদের কমিশন কী ধরণের নির্বাচন উপহার দিয়েছে তা সকলের জানা। এ বিষয়ে বেশি বলার প্রয়োজন নেই। এই নতুন সার্চ কমিটির একজন সদস্য হয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন। জনাব হোসাইনের আরেকটি পরিচিতি আছে- ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্যে আবেদনপত্র কিনেছিলেন। মানব জমিন পত্রিকার ১১ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো– “নির্বাচনী মাঠে নামছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সিলেট সদর ও সিটি করপোরেশন) আসন থেকে প্রার্থী হতে চান। এ জন্য তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তিনি প্রথম দিনই তার পক্ষে মনোনয়নপত্র কেনার পর সেটি জমা দেয়ারও প্রস্তুতি চলছে।”

আরও পড়ুন

সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য দুইজন

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি  গঠন করা হয়েছে বলে শনিবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে জানানো হয়। ছয় সদস্যের ওই সার্চ কমিটিতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ছাড়াও রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

Link copied!