কেন ১২ জুলাই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে বিএনপি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১০, ২০২৩, ০৪:২০ এএম

কেন ১২ জুলাই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে বিএনপি?

সংগৃহীত ফাইল ছবি

আসছে বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীতে সমাবেশ করে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। ওইদিন বেলা ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আর সমাবেশের জন্য মাইক ব্যবহার ও সার্বিক নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির পাশাপাশি জোটের অন্য শরিক দলগুলোও পৃথকভাবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে একই কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।  

রবিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের ভাসানী মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক যৌথসভায় দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান এসব বিষয়ে কথা বলেছেন।

১২ জুলাই থেকে নতুন পর্যায়ের আন্দোলনের ঘোষণা আসছে জানিয়ে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে আমানুল্লাহ আমান বলেন, “১২ জুলাইয়ের সমাবেশে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে আপনাদের আসতে হবে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। সেখান থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন পর্যায়ের আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন।”

সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান আরও বলেন, “এই সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চাচ্ছে। তেমন কোনো নির্বাচন এই দেশে হবে না। জনগণ সেই নির্বাচন করতে দেবে না।”

সরকার পতনের দাবিতে সাধারণ মানুষও মাঠে নেমে এসেছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আগামী ১২ জুলাই থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করার মাধ্যমে, নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়েম করে এক দফা বাস্তবায়ন না করে ঘরে ফিরব না।”

হঠাৎ কেন এই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ডাক?

এই সময়ে কেন এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা-এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি আমানুল্লাহ আমান।  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এর কারণ ব্যাখ্যা করেননি।  

মির্জা ফখরুল  সম্প্রতি বলেছেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত দলগুলোর সাথে আলোচনা করছি। সব দলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে অতি শিগগিরই চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, এবারের আন্দোলন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলন দেশের সব মানুষ সম্পৃক্ত হবে এবং জনগণ তার অধিকার আদায় করে নেবে।

তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল।

ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এরই মধ্যে ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, অনুসন্ধানী মিশন দলটি ঢাকায় অবস্থানকালে সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বৈঠক করতে আগ্রহী। আর এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে এরই্ মধ্যে জানানো হয়েছে।

তাই বিএনপির হাইকমান্ড তাদের অবস্থানকালেই বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথ গরম করে তাদের দাবির পক্ষে সাধারণ জনগণের সমর্থনের বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে দেখাতে চাইছে।

বিএনপির ওই সূত্রটি বলছে, যেহেতু প্রতিনিধি দলটি ২৩ জুলাই ঢাকা ছেড়ে যাবে। তাই এর আগেই  বিশাল সমাবেশ করে তাদের দাবির প্রতি ইইউ’র সমর্থন প্রত্যাশাও করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড।

এদিকে, বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এক দফার পাশাপাশি বিএনপি একাধিক শক্ত কর্মসূচিও ঘোষণা করবে।

আর এবিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে শরিক জোটের সাথে বৈঠক করেছে দলটির নেতারা। এসব বৈঠকে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি ও তার জোটের শরিক দলগুলো সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনে নামে। এসময় তারা গণমিছিল, গণ-অবস্থান, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে।

Link copied!