সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণঅবস্থান চলছে। এই কর্মসূচি থেকে নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর ঢাকার গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে নয়াপল্টন যাবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গণ-অবস্থানের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব, সিনিয়র নেতারাসহ দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও। দুপুর ২টায় এই কর্মসূচির শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সকাল ১০টায় গণ-অবস্থান শুরুর কথা থাকলেও ব্যানার, ফেস্টুন, দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি ও প্ল্যাকার্ড হাতে খণ্ড-খণ্ড মিছিল নিয়ে ভোর থেকেই নয়াপল্টনে এসে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে ত্রিপল বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট মঞ্চ করা হয়েছে। বিএনপির এই কর্মসূচিকে ঘিরে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কের এক পাশ বন্ধ রয়েছে।
গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কাকরাইল ও ফকিরাপুল মোড়ে জলকামান নিয়ে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন।
এদিকে, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে রাজধানীর বিজয়নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে ফুটপাতে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণঅবস্থান করছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাকর্মীরা।
জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে সেখানে উপস্থিত আছেন- জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এসএম শাহাদাত, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ফরিদ উদ্দিন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, শাহ আহমেদ বাদল, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের কমরেড নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী ও ইঞ্জিনিয়ার আবদুল বারিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
একই সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅবস্থান করছে সাতদলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, পূর্ব পান্থপথের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি), পুরানা পল্টন মোড়ে ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে (পূর্ব প্রান্তে) চার দলীয় বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং আরামবাগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে মোস্তফা মোহসীন মন্টু নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।
ঢাকার বাইরেও যেসব বিভাগীয় শহরে (সাংগঠনিক বিভাগ) গণঅবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে, প্রতিটিতে দলের অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
জানা গেছে, গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। নতুন এ কর্মসূচি চিন্তার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি উদ্যোগের প্রতিবাদ করা। দুদিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভোগান্তি বাড়াবে। এ কারণে জনগণের দাবি সামনে রেখে কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
এর আগে ৩০ ডিসেম্বর সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যুগপৎভাবে গণমিছিল করেছিল। তার আগে বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও ২৭ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে। এখন তারা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল থেকে গণ-অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর আগে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা ও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখাও ঘোষণা করে দলটি।