আগস্ট ৮, ২০২২, ০৯:১৭ এএম
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন আজ ৮ আগস্ট। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন মহীয়সী এই নারী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনে নানা ঘটনায় বঙ্গমাতার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র বাঙালি জাতির পিতাই নন, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম নেতা পরিণত হওয়ার পেছনে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান উল্লেখযোগ্য।
দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও বঙ্গমাতার পরামর্শ নিতেন।
বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অফুরান প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ছয়-দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন গ্রেপ্তার হন, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বঙ্গমাতার নিকটে ছুটে আসতেন। দলের ওই কঠিন সময়ে তিনি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতেন।শুধু তাই নয়, দলের জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে তিনি তারও ব্যবস্থা করতেন।
১৯৭১ সালের মার্চের ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেবেন। তবে ভাষণের বিষয়বস্তু তখনও চূড়ান্ত হয়নি। ৭মার্চ আগের দিন দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক চললেও ভাষণের বিষয়বস্তু ঠিক করা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু তখন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে ভাবছেন-ভাষণে তিনি কী বলবেন? ঠিক ওই সময় বঙ্গমাতা এগিয়ে আসলেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘অনেকে অনেক কিছু বলে, লিখে দিয়েছে, একমাত্র তুমিই জানো কী বলতে হবে! তোমার মনে ঠিক যে কথাগুলো আসবে, তুমি তা-ই বলবে।’
বঙ্গবন্ধু কথা শুনে হাসলেন, তারপর মাঠের দিকে রওনা হলেন। তার দীর্ঘ ৩০ বছরের রাজনীতির আলোকে নিজের চিন্তা থেকে তিনি ৭ মার্চের ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ নিয়ে অনেক বিশ্বনেতা, অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ওই সময়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে।
খুব অল্প বয়সে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিয়ে হয় বঙ্গমাতার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সপরিবারে খুনি চক্রের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ হন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
এদিকে, বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
এছাড়া অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ।
বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে আরও দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর একটির আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অপর কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
মহিলা লীগের উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিকালে ফজিলাতুন্নেছা অসহায় ও দুস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।