অক্টোবর ৩, ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ছয় দাবিতে রোববার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক থেকে ওএসডি হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তারা।
চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল, ওএসডি প্রত্যাহার, শর্ত আরোপ করে অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট নেওয়া বন্ধ এবং পানিশমেন্ট ট্রান্সপার বন্ধসহ ছয় দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এছাড়া চাকরিচ্যুত এবং ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা তাদের নানা দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা এমদাদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের থাকার কথা ছিল ব্যাংকে। অথচ আজ রাজপথে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রহসনমূলক পরীক্ষার আয়োজন করে ৪০০ জনকে ছাঁটাই এবং পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ওএসডি করেছে।’
সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘরে চরম মানবিক বিপর্যয় চলছে দাবি করে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘এর মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্মীদের অফিস আইডি এবং ব্যক্তিগত স্যালারি আইডি বন্ধ করে দিয়েছে। এ মুহূর্তে বাসা ভাড়া দেওয়া, বাবা-মায়ের ওষুধ কেনা বা বাজার করার মতো টাকা আমাদের হাতে নেই।’
সকলকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা হুমায়ুন মোক্তার রশীদ বলেন, ‘পরিবার নির্ভর করে আমাদের বেতনের ওপর। আমরা বেতন পাচ্ছি না, অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে রেখেছে। সবাই মানবেতর জীবনযাপনের দিকে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। এই বিপর্যয়ে এগিয়ে আসেন।’
আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, চাকরির আট বছর পর এসে মূল্যায়ন পরীক্ষা আয়োজনের নাম প্রহসনের পরীক্ষা বয়কট করার কারণে ওএসডি ও চাকরিচ্যুত করা হয়। ব্যাংকের পরীক্ষার মতো ওএসডি এবং চাকরিচ্যুতের নোটিশও অবৈধ। তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ বা চাকরিচ্যুতের কারণ উল্লেখ করেনি।
ব্যাংক কর্মচারী মোহাম্মদ সোহেল বলেন, আমরা ব্যাংকের সাধারণ কর্মী। ব্যাংকে আমাদের কোনো অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি না থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কেন আমাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে এই জবাব আমরা পাইনি। আমরা আজ খাবার কেনার টাকা জোগাড় পর্যন্ত করতে পারছি না।
গত কয়েকদিন কর্মক্ষেত্রে ওএসডি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে দাবি করেন বক্তারা। তারা বলেন, আগামী রোববার থেকে আমরা কর্মবিরতিতে যাব। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।
এ সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতিসহ দেশের সকল রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাংক কর্মীদের পাশে থাকার অনুরোধ জানানো হয়। সুষ্টু কর্মপরিবেশ তৈরি করে সকলকে কর্মস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবিও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিপুলসংখ্যক কর্মী সরাসরি সিভি দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রদবদল আসে ওই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে। ২০১৭ সালের পরে ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা আয়োজন করে। ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তার অংশগ্রহণের কথা থাকলেও মাত্র ৪১৪ জন পরীক্ষা দেন। যারা আসেননি, সেই ৪,৯৭১ জনকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়। আর পরীক্ষার বিরোধিতা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে দুই দফায় চাকরিচ্যুত হন ৪০০ কর্মী।