একীভূত হওয়া পাঁচটি ব্যাংকের আমানতকারীদের হিসাব নবগঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া শেষ হলেই বিদ্যমান পাঁচটি ব্যাংকের গ্রাহকদের সব আমানত স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। স্থানান্তরের পর গ্রাহকরা তাঁদের বর্তমান চেক বই ব্যবহার করে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নির্ধারিত সীমার বাইরে গ্রাহকদের অবশিষ্ট আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে এবং সেই আমানতের ওপর প্রচলিত হারে মুনাফা প্রদান করা হবে। প্রাথমিকভাবে উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করা হলেও ধাপে ধাপে এই সীমা বাড়ানো হবে। যেসব গ্রাহকের হিসাবে দুই লাখ টাকার কম রয়েছে, তাঁরা একবারেই পুরো টাকা তুলতে পারবেন। আর যাদের হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি রয়েছে, তাঁরা চাইলে প্রতি তিন মাস অন্তর এক লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ও গুরুতর অসুস্থ আমানতকারীদের ক্ষেত্রে এই সীমা শিথিল থাকবে।
অনিয়ম ও ঋণ খেলাপির কারণে তারল্য সংকটে পড়া পাঁচটি ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সব জটিলতা কাটিয়ে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। স্থানান্তর শেষ হলে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের নতুন করে হিসাব খোলার প্রয়োজন হবে না; স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের নামে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে হিসাব চালু হবে এবং চেক ইস্যুসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর সেনাকল্যাণ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং আমানতকারীদের শেয়ার থেকে আসবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে প্রায় ৭৫ লাখ আমানতকারীর এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। বিপরীতে এসব ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় একটি অংশ খেলাপি। দেশজুড়ে এই ব্যাংকগুলোর ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ও ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে।