ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববাজারে মূল্যবান ধাতুর দামে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৫০০ ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। একই সঙ্গে রুপা ও প্ল্যাটিনামের দামও পৌঁছেছে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৪৯২ দশমিক ৫১ ডলারে দাঁড়ায়। লেনদেনের শুরুতে স্বর্ণের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫২৫ দশমিক ১৯ ডলার স্পর্শ করে। ফেব্রুয়ারি ডেলিভারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ ফিউচারের দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫২০ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছেছে।
এদিন রুপার দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৭২ দশমিক ২৭ ডলারে দাঁড়ায়। এর আগে রুপার দাম সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৭০ ডলারে পৌঁছেছিল। একই সময়ে প্ল্যাটিনামের দাম ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ২ হাজার ৩৫১ দশমিক ০৫ ডলারে দাঁড়ায়, যা সেশনের এক পর্যায়ে রেকর্ড ২ হাজার ৩৭৭ দশমিক ৫০ ডলার ছুঁয়েছে। প্যালাডিয়ামের দামও প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮৯৭ দশমিক ১১ ডলারে ওঠে, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষকদের মতে, নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মূল্যবান ধাতুর চাহিদা বৃদ্ধি এবং আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার আরও কমতে পারে—এমন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণসহ অন্যান্য ধাতুতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন।
টেস্টিলাইভের গ্লোবাল ম্যাক্রোর প্রধান ইলিয়া স্পিভাক বলেন, বিশ্বায়নের বিচ্ছিন্নতার প্রেক্ষাপটে মূল্যবান ধাতু এখন একটি অনুমানভিত্তিক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার সময়ে সার্বভৌম ঝুঁকিমুক্ত নিরপেক্ষ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, বছরের শেষ দিকে বাজারে তারল্য কম থাকায় সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে, তবে সামগ্রিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার সম্ভাবনাই বেশি। আগামী ছয় থেকে বারো মাসের মধ্যে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে এবং রুপার দাম ৮০ ডলারের দিকে এগোতে পারে বলেও তিনি ধারণা দেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ৭০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ১৯৭৯ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি। নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমার প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো ক্রয়, ডলারের মান দুর্বল হওয়া এবং ইটিএফে বিনিয়োগ প্রবাহ—সব মিলিয়ে এই উত্থান ঘটেছে।
একই সময়ে রুপার দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশেরও বেশি। বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তালিকায় রুপার অন্তর্ভুক্তি এবং শক্তিশালী ক্রয় প্রবণতার কারণে রুপার দাম স্বর্ণকেও ছাড়িয়ে গেছে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, চলতি সপ্তাহে স্বর্ণ ও রুপার দাম নতুন রেকর্ড গড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কম থাকা এবং বৈশ্বিক ঋণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে মূল্য সংরক্ষণের মাধ্যম হিসেবে এই ধাতুগুলোর আকর্ষণ আরও বেড়েছে।