ঋণাত্বক ধারায় রেমিটেন্স: এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ৬.২৩ শতাংশ

ফাইন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস

জুন ২, ২০২২, ০৪:৫৯ এএম

ঋণাত্বক ধারায় রেমিটেন্স: এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ৬.২৩ শতাংশ

গত মে মাসের প্রথম দিকে ইতিবাচক ধারা থাকলেও মাস শেষ হওয়ার পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সুখবর মেলেনি; আগের বছরের একই মাসের চেয়ে কম এসেছে ১৩ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলের চেয়েও ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ কমেছে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে প্রবাসীরা মোট ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালের একই সময়ে যা ছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। আগের মাসে রোজা ও ঈদকে ঘিরে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। সরকারি প্রণোদনা বাড়ানোর কারণে এবং ডলারের দাম আগের মাসের চেয়ে আরও বেড়ে যাওয়ায় মে মাসে রেমিটেন্সে গতি আসবে বলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি, প্রবাসীদের পাঠানো আয়ে ধাক্কা লেগেছে।

দেশে ডলারের দামে রেকর্ড হলে আগের চেয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের বিপরীতে বেশি টাকা পাচ্ছিলেন প্রবাসীদের স্বজনরা। এরপরও রেমিটেন্সের ঋণাত্মক ধারা কাটেনি। শতকরা হারে গত মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স কম এসেছে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এপ্রিলে রেমিটেন্স এসেছিল ২০১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। মে মাসে আসা প্রবাসী আয়সহ চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের এ সময়ে এসেছিল ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এ হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ (৩৬৪ কোটি ২৪ লাখ ডলার) কম এসেছে রেমিটেন্স।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বরাবরের মত এবারও রেমিটেন্স বেশি এসেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।

মে মাসে মোট ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এসেছে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে, যা গত মাসের মোট রেমিটেন্সের ৮৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, যা মে মাসের মোট রেমিটেন্সের ১৫ শতাংশ। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার চাপে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশের আমদানি দায়ের বড় একটি অংশ পূরণ করে থাকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই এ খাতে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি রয়েছে। ডলারের সঞ্চয় নিয়ে উদ্বেগের এ সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে ইতোমধ্যে নীতিমালাতেও কিছু ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে বৈধ উপায়ে দেশে রেমিটেন্স পাঠানো উৎসাহিত করতে সরকার নগদ প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেছিল। এরপরও নেতিবাচক ধারা রয়েই গেছে। গত ২৫ মে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। গত ২৩ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হবে না। কাগজপত্রের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ায় সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের প্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

Link copied!