প্রবাসী আয়ের পর পণ্য রপ্তানি আয়েও নতুন বছরে সুখবর মিলল। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৪৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের বা ৪১ হাজার ৭১০ কোটি টাকার পণ্য, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। এক মাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি। এর আগে গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৯০ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান বুধবার (১ জুন) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশিও মুদ্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তা আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৬ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। যদিও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলার।
মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ২ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তা আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
গত দুই বছর ধরেই নিট পোশাকের রপ্তানি বাড়ছিল। সেটি এখনো বজায় আছে। তবে একই সঙ্গে ওভেন পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধিরও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১ হাজার ৩২৭ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৩২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭১ কোটি ডলারের। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, নতুন করে কোনো ঝামেলা না হলে আগামী জুন পর্যন্ত পোশাক রপ্তানির এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে যেসব পোশাক রপ্তানি হবে, তার ক্রয়াদেশ আগেই এসেছে। অবশ্য তারপরের ক্রয়াদেশ নিতে উদ্যোক্তারা ভয় পাচ্ছেন। কারণ, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুতার দাম বৃদ্ধির শঙ্কাও আছে।
তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি হয়েছে হোম টেক্সটাইলে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৮৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছর হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৩৭ কোটি ডলারের। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় হয়েছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে। গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৭০ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য এবং ৬৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৯ শতাংশ কমলেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।